যুক্তরাষ্ট্রের ইও লরেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন ড. জাহিদ হাসান

মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

 

 

১২৩ বার দেখা হয়েছে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান গবেষণায় অনন্য অবদানের জন্য প্রেস্টিজিয়াস আর্নেস্ট অরল্যান্ডো লরেন্স অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন প্রিন্সটনের ইউজিন হিগিংস বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত বিজ্ঞানী জাহিদ হাসান তাপস। গত ১২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানী বিষয়ক সম্পাদক ড্যান ব্রাওলেট এ পুরস্কার ঘোষণা দেন।

পুরস্কারটি দেয়া হয় মূলত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয়, অর্থনৈতিক ও জ্বালানী সুরক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জি (ডিওই)’র মিশনের সমর্থনে গবেষণা ও বিকাশে ব্যতিক্রমী অবদানের জন্য। 

এ বছর জাহিদ হাসানসহ মোট আট জন পাচ্ছেন এই পুরস্কার। আগামী ১৯ জানুয়ারি একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই পুরস্কার দেয়া হবে। প্রতিটি লরেন্স পুরষ্কার বিজয়ী সম্মাননা হিসেবে পাবেন মার্কিন জ্বালানি সচিবের স্বাক্ষরযুক্ত একটি প্রশংসাপত্র, আর্নেস্ট অরল্যান্ডো লরেন্সের অনুরূপ স্বর্ণপদক এবং ২০ হাজার ডলারের চেক।

আর্নেস্ট অরল্যান্ডো লরেন্স অ্যাওয়ার্ডটি ১৯৫৯ সালে বিজ্ঞানী আর্নেস্ট অরল্যান্ডো লরেন্সকে সম্মান জানানোর জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। লরেন্স ছিলেন একজন শীর্ষস্থানীয় কণা ত্বরক সাইক্লোট্রন উদ্ভাবনকারী এবং পদার্থবিদ্যায় ১৯৩৯ সালের নোবেল পুরষ্কার অর্জনকারী পদার্থবিজ্ঞানী। লরেন্স দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশেও অবদান রাখেন এবং মার্কিন জাতীয় পরীক্ষাগার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেন।

আমেরিকার এই প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কারে ভূষিত হয়ে জাহিদ হাসান বলেন, “লরেন্সের একজন ভক্ত হিসেবে আমি এই সম্মাননাটি অর্জন করে বেশ সম্মানিত এবং গর্ববোধ করছি। তিনি ছিলেন আমার একজন অন্যতম বৈজ্ঞানিক নায়ক।”

এর পাঁচ বছর আগে গোটা বিশ্বে আরও একবার হইচই ফেলে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. জাহিদ হাসান তাপস। এ সময় ‘ভাইল ফার্মিয়ন’ নামে এক অধরা কণার অস্তিত্ব আবিস্কার করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক। 

যে ‘ভাইল ফার্মিয়ন’ কণার কথা ১৯২৯ সালে প্রথম কল্পনা করেছিলেন বিজ্ঞানী হারম্যান ভাইল। এর ঠিক ৮৫ বছর পর সেই ‘ভাইল ফার্মিয়ন’ কণার অস্তিত্ব আবিস্কার করে সাড়া ফেলে দেন ড. জাহিদ।  অন্যদিকে, ১৯২৪ সালে ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু ‘বোসন’ নামে যে কণা আবিস্কার করেন, তার ৯১ বছর পর আরেক বাঙালি ড. জাহিদের নেতৃত্বে আবিস্কৃত হয়েছে নতুন গ্রুপের এই কণা।

ফার্মিয়ন কণা আবিস্কারের পথ ধরে এবার তিনি নিয়ে এসেছেন আরও এক চমক! বিশ্ববাসীকে অবাক করে দেয়ার মতো তার নতুন চমকের নাম ‘টপোলজিক্যাল ক্যাগোমে কোয়ান্টাম চুম্বক’। তার এই আবিস্কারটির কথা প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘নেচার’-এ। ক্যাগোমে কোয়ান্টাম চুম্বক আবিস্কারের ফলে কম্পিউটার বর্তমানের চেয়ে শতগুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন হবে এবং মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে যুক্ত হবে অধিকতর প্রযুক্তি।

অধ্যাপক ড. জাহিদ হাসান তাপসের নেতৃত্বে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ২২ সদস্যের একদল গবেষক দীর্ঘদিন গবেষণার পর আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছেন ‘ক্যাগোমে কোয়ান্টাম চুম্বক’। 

যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে বসবাস করা অধ্যাপক ড. জাহিদ হাসান তার নতুন এই আবিস্কার সম্পর্কে বলেন, ‘টপোলজিক্যাল ক্যাগোমে কোয়ান্টাম ম্যাগনেট নামের নতুন আবিস্কারটি কম্পিউটারকে শতগুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন করবে। কম্পিউটারে যে মেমোরি বা হার্ডডিস্ক রয়েছে, সেখানে একটি স্টোরেজ থাকে, ক্যাগোমে কোয়ান্টাম ম্যাগনেট সেই স্টোরেজকে শতগুণ বেশি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন করবে। অর্থাৎ অল্প জায়গার মধ্যে ১০০ গুণ বেশি তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে।’

তার এই আবিস্কার ন্যানো টেকনোলজিতে একটি বিপ্লব আনতে পারে। ড. তাপস বিষয়টি আরও পরিস্কার করে বলেন, ‘ধরুন, নতুন কোনও কম্পিউটারে ইনফরমেশন স্টোরেজ ক্যাপাসিটি হয়তো ১০০ মেগাবাইট। এই ক্যাগোমে কোয়ান্টাম ম্যাগনেট ব্যবহারে সেটা আরও বেশি ক্যাপাসিটিতে উন্নীত হবে। কিন্তু, সেটা ঠিক কীভাবে করা সম্ভব, কীভাবে ওটা কাজ করবে- সেটাই আবিস্কার করেছি।’ তবে এটার ফল পেতে আরও বেশকিছু সময় লাগতে পারে বলেও জানান তিনি।

ক্যাগোমে কোয়ান্টাম ম্যাগনেট কম্পিউটার এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য অপরিহার্য হতে পারে। এ বিষয়ে ড. জাহিদ হাসান বলেন, ‘মানব সভ্যতাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য কাজ করছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের এই আবিস্কারের সুফল ভোগ করবে। সেটা হয়তো ১০ থেকে ২০ বছর লাগতে পারে।’ 

মূলত- আমাদের এই পৃথিবীর যাবতীয় গ্রহ-নক্ষত্র, নদী-নালা, সমুদ্র-পর্বত, প্রাণিজগৎ, গাছপালা, মানুষ সব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার পিণ্ড। মহাজগতের এসব বস্তুকণাকে বিজ্ঞানীরা দু’ভাগে ভাগ করেন। একটি হলো- ‘ফার্মিয়ন’, অন্যটি- ‘বোসন’। আবিস্কারক ভারতীয় বাঙালি পদার্থ বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামেই নামকরণ করা হয় বোসন কণার। আর ‘ফার্মিয়ন’ কণার একটি উপদল হলো- ‘ভাইল ফার্মিয়ন’, এই ভাইল ফার্মিয়ন কণার মতোই ‘ক্যাগোমে কোয়ান্টাম ম্যাগনেট’ আবিস্কার মানব সভ্যতার জন্য অনিবার্য হয়ে হয়ে উঠবে।

যুগান্তকারী এই আবিষ্কার সম্পর্কে  ড. জাহিদ বলেন, ‘ক্যাগোমে হলো জাপানি একটি বাস্কেট ডিজাইন প্যাটার্ন। এই প্যাটার্নটা জাপানিরা অনেক আগেই আবিস্কার করেছিল। কিন্তু তারা টপোলজিক্যাল কোয়ান্টাম চুম্বক আবিস্কার করতে পারেনি, যেটা আমরা পেরেছি। আবিস্কৃত এই কোয়ান্টাম চুম্বকটি এমআরআই করার ক্ষেত্রে আরও অধিকতর স্বচ্ছ দেখাবে।’

ভাইল ফার্মিয়ন কণা সম্পর্কে অধ্যাপক জাহিদ হাসান তাপস জানান, তিন প্রকারের ফার্মিয়নের মধ্যে ‘ডিরাক’ ও ‘ময়োরানা’ নামক ফার্মিয়ন কণার খোঁজ আগেই পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বহু গবেষণা ও প্রতীক্ষার পরও ‘ভাইল ফার্মিয়ন’ কণার সন্ধান না মেলায় বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন ‘নিউট্রিনোই’ সম্ভবত ভাইল ফার্মিয়ন। ১৯৯৮ সালে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ‘নিউট্রনের’ ভর আছে, কিন্তু ‘ভাইল ফার্মিয়ন’ ভরশূন্য। এরপর থেকে ভাইল ফার্মিয়নের খোঁজে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালাতে থাকেন। 

ড. জাহিদ আরও বলেন, ভাইল ফার্মিয়নের অস্তিত্ব প্রমাণ হওয়ায় দ্রুতগতির ও অধিকতর দক্ষ ইলেক্ট্রনিকস যুগের সূচনা হবে। এই আবিস্কার কাজে লাগিয়ে আরও কার্যকর নতুন প্রযুক্তির মোবাইল ফোন বাজারে এসে যাবে, যা ব্যবহারে তাপ সৃষ্টি হবে না। ভাইল ফার্মিয়ন কণার ভর নেই বলে এটি ইলেকট্রনের মতো পথ চলতে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে না, যাতে তৈরি হবে নতুন প্রযুক্তির কম্পিউটার ও বৈদ্যুতিক নানা সামগ্রী।

গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান অধ্যাপক ড. জাহিদ হাসান তাপস। তিনি শ্রীপুর আসন থেকে ছয়বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলীর পুত্র। ড. জাহিদের মা নাদিরা আলী তালুকদার। ১৯৭০ সালের ২২ মে ঢাকার সেন্ট্রাল রোডের নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন জাহিদ হাসান তাপস। 

১৯৮৬ সালে ধানমণ্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এসএসসিতে ঢাকা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। আর ১৯৮৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে এইচএসসি পাস করেন। এরপর গণিতে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। চার দিন ক্লাস করার পর আর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়েই যাননি। 

তখন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রায় সময়ই মারামারি হতো বলেই জানা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির এই বিষয়টা জাহিদ একদমই পছন্দ করতেন না। ওই বছরই স্কলারশিপ নিয়ে চলে যান আমেরিকা। অস্টিনের টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন পদার্থবিজ্ঞানে। সুযোগ হয় নোবেল বিজয়ী তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন ভাইনভার্গের কাছে শিক্ষা গ্রহণের। এরপর মাস্টার্স ও পিএইচডি করতে চলে যান স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

মূলত তখন থেকেই পদার্থবিজ্ঞানের জগতে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। কাজ করেন অসংখ্য খ্যাতিমান ও নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানীর সঙ্গে। এরই মধ্যে বিশেষ আমন্ত্রণে গেস্ট হয়ে লেকচার দিতে যান প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার লেকচার শুনে মুগ্ধ হন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি। অতঃপর প্রস্তাব আসে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের।

ড. জাহিদ হাসান তাপসের শৈশবে গৃহশিক্ষক ছিলেন বর্তমানে ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মাহমুদ হাসান মুকুল। পুরনো ওই ছাত্রের কথা বলতে গিয়ে মাহমুদ হাসান মুকুল বলেন, ‘তাপস শুধু মেধাবিই ছিল না, সে এক বিস্ময় বালক। আমি যদি এক নিয়মে অঙ্ক করে দিতাম, পরদিন বাসায় গিয়ে দেখতাম সেই অঙ্কই দুই-তিন নিয়মে করে রেখেছে সে। নিজেই আবিস্কার করত অঙ্কের নতুন নতুন নিয়ম। শিশু তাপসের এমন প্রতিভা দেখে অন্য শিক্ষকরা শুধু অবাকই হতেন না, তার কাছ থেকে অঙ্কের নতুন নিয়ম বের করার কৌশলও জেনে নিতেন।’

পুত্রের এমন বিস্ময়কর মেধা সম্পর্কে গর্বিত পিতা অ্যাডভোকেট রহমত আলীর ভাষ্য ছিল, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একদিন শিশুপুত্র তাপসকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু তখন তাপসকে আদর করে কোলে নিয়ে বলেছিলেন, তোমার এই ছেলে একদিন অনেক বড় হবে। ওর জন্য আমার অন্তহীন আশীর্বাদ রইলো।

পদার্থবিজ্ঞানী ড. জাহিদ হাসান তাপস বর্তমানে বার্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে গবেষক হিসেবে কর্মরত আছেন। ১৯৯০ সালে স্নাতকে কৃতিত্বের জন্য তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। এছাড়া তিনি কোয়ান্টাম মেথডের ওপর ২০০৮ সালে ক্রিয়েটিভিটি এক্সটেনশন অ্যাওয়ার্ড, ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন সম্মানেও ভূষিত হন। অনুষ্ঠানে গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

পিএইচডি শেষ করে ২০১২ সালে আইনস্টাইন, নিলস বোর, ওপেন হাইমারের বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতেও শিক্ষকতা করেন কিছুদিন। তার অধীনে এখন পর্যন্ত বহু শিক্ষার্থী পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। 

১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত একশটি দেশে প্রায় আড়াইশত আন্তর্জাতিক সেমিনারে লেকচার দেন ড. জাহিদ। সুইডেন, ফ্রান্স, ভারত, ইতালি, জাপান, চীন, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক নানা সেমিনারে নিয়মিত লেকচার দিচ্ছেন তিনি। 

বিশ্বখ্যাত ল্যাবরেটরি সার্ন (সিইআরএন), লরেন্স বার্কলে, ব্রোকহেভেন ন্যাশনাল ল্যাবে কাজ করার সুযোগও হয়েছে ড. জাহিদ হাসান তাপসের। সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তার সম্পৃক্তা রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত রয়েছেন। 

ড. জাহিদ হাসান জানান, বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু বলেছেন, যারা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান হয় না, তারা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না। ছোট বেলায় কোনও এক ক্লাসে শিক্ষকের কাছে জাহিদ হাসান তাপস সত্যেন্দ্রনাথ বসুর এই উক্তিটি শুনে আস্বস্ত হন। ভেতরে লালন করেন। বিজ্ঞানের প্রতি ক্রমশই দুর্বল হতে থাকেন। বিজ্ঞান নিয়ে খেলা করতে শুরু করেছেন সেই ছোট বেলা থেকেই। 

মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৮৬ সালে জাহিদ হাসান তাপস লিখে ফেলেন ‘এসো ধূমকেতুর রাজ্যে’ শিরোনামে বিজ্ঞানের একটি বই। সে সময় বইটি ব্যাপক সাড়া ফেলে। বইটি পড়ে বাংলা ভাষার বিজ্ঞান সাহিত্যের পথিকৃৎ আবদুল্লাহ্ আল-মুতী শরফুদ্দীন ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। আশীর্বাদ করেছিলেন ‘তুমি অনেক বড় হবে।’ 

ড. জাহিদ হাসান তাপস জানান, জাতি হিসেবে আমি সবাইকে চিন্তা করতে বলি। এই জাতির অনেক সম্ভাবনা আছে। তরুণদের সঠিক পরিচর্যা, প্রশিক্ষণ ও সুবিধা দিলে একজন নয়, এরকম হাজার হাজার বিজ্ঞানীর জন্ম হবে। ২০১২ সালে আলোর মৌলিক একক (ফোটন) বিশুদ্ধ কোয়ান্টাম অবস্থার পরিমাপের পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য ফ্রান্সের সার্জ হারোশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড ওয়াইনল্যান্ডকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। সেই বিবেচনায় ড. জাহিদ হাসান তাপসের অবদানকে তুলনা করলে এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না বিশ্বমিডিয়াগুলো।

বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির জন্য ড. জাহিদ হাসান তার মায়ের কাছে চিরঋণী বলেও জানান। তিনি বলেন, আমার মা সব সময় আমাকে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তৈরি করতেন। বিভিন্ন বই কিনে পড়ার জন্য টাকা দিতেন। 

মো. রহমত আলী ও নাদিরা আলী তালুকদার দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে ড. জাহিদ হাসান তাপস প্রথম। দ্বিতীয় জন হলেন- অ্যাডভোকেট জামিল হাসান দুর্জয়। আর তাদের একমাত্র কন্যা অধ্যাপিকা রোমানা আলী তুসী।

ড. জাহিদ হাসান তাপসের মা নাদিরা আলী তালুকদার জানান, ‘আমার বড় ছেলে জাহিদ ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবি ছিল। সে যখন স্কুলে পড়াশোনা করত তখন শিক্ষক ক্লাসে অঙ্ক শেখাতেন এক নিয়মে। শিক্ষকের শেখানো সেই এক নিয়মের অঙ্ক করে তৃপ্তি পেত না শিশু জাহিদ। নিজেই আবিষ্কার করত অঙ্কের নতুন নতুন নিয়ম। একই অঙ্ক তিন/চার নিয়মে করে পরদিন ক্লাসে দেখাত। শিশু তাপসের এমন প্রতিভা দেখে শিক্ষকরা শুধু অবাকই হতেন না, তার কাছ থেকে অঙ্কের নতুন নিয়ম বের করার কৌশলও জেনে নিতেন। শিক্ষকরা তখনই বলেছিলেন, বিস্ময়কর এই বালক একদিন বিশ্ব জয় করবেন। শিক্ষকদের কথাই সত্য হলো।’

আরো পড়ুন