বৈশ্বিক মহামারি করোনা নিয়ে একাধিকবার বিরুপ মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন। এবার ভাইরাসটি প্রতিরোধে আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন নিয়েও বেফাঁস মন্তব্য করতে ছাড়লেন তিনি। বলছি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারোর কথা।
সম্প্রতি করোনা প্রতিরোধে আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ ছাড়পত্র দিয়েছে। প্রয়োগও শুরু হয়েছে কয়েকটিতে। এমতাবস্থায় ভ্যাকসিন না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।
শুধু তাই নয় ভ্যাকসিন নিয়ে বোলসোনারো বলেছেন, ‘করোনা ভ্যাকসিন মানুষকে কুমির বানিয়ে দিতে পারে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ছেলেরা মেয়েকণ্ঠে কথা বলবে আর মেয়েদের দাঁড়ি উঠবে। এ কারণে নিজে কখনও এই ভ্যাকসিন নিব না।’
ব্রাজিলে মার্কিন ফার্মা জায়ান্ট ফাইজার ও জার্মান সংস্থা বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হয়েছে কয়েক মাস ধরে। ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিনটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনুমোদন দিয়েছেন। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও নিয়েছেন সেই টিকা। এছাড়া যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে ভ্যাকসিন। ব্রাজিলেও শুরুর হয়েছে টিকাদান কর্মসূচি।
এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার বোলসোনারো এমন অযাচিত মন্তব্য করে বসলেন। তিনি বলেছেন, ‘ফাইজারের চুক্তিতে একটা বিষয় পরিষ্কার: আমরা কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী নই।’
বোলসোনারো বলেন, ‘আপনি যদি কুমিরে রূপান্তরিত হন, সেটা আপনার সমস্যা। যদি অতিমানবে (সুপারহিউম্যান) পরিণত হন, যদি কোনও নারীর দাঁড়ি উঠতে শুরু করে অথবা কোনও পুরুষ নারীকণ্ঠে কথা বলতে শুরু করেন, তাদের কিছু করার থাকবে না।’
এর আগে গত বুধবার টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেই ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন, এটা বিনামূল্যে হলেও বাধ্যতামূলক নয়।
তবে বৃহস্পতিবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট রুল জারি করেছেন, ‘করোনা ভ্যাকসিন নেয়া বাধ্যতামূলক, কিন্তু কারও ওপর বলপ্রয়োগ করা যাবে না। অর্থাৎ, কর্তৃপক্ষ চাইলে ভ্যাকসিন না নেয়ায় মানুষজনকে জরিমানা অথবা নির্দিষ্ট জায়গায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারবে। তবে জোর করে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে না।’
অথচ সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশকে অনেকটা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জেইর বোলসোনারো বলেছেন, তিনি কখনোই করোনা ভ্যাকসিন নেবেন না।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘অনেকেই বলবে, আমি বাজে উদাহরণ সৃষ্টি করছি। কিন্তু যারা এসব কথা বলে, সেই নির্বোধদের বলছি, আমি ইতোমধ্যেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি, আমার অ্যান্টিবডি রয়েছে। তাহলে আমি কেন ভ্যাকসিন নেব?’
অবশ্য করোনায় একবার আক্রান্ত হলে আর হবে না- ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্টের এই দাবির পক্ষে এখনও তেমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মেলেনি। বরং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পর আবারও আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাছাড়া, একবার আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীর শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তার প্রতিরোধী ক্ষমতা কতদিন থাকে, সেটাও এখনও নিশ্চিত নয়।
গত জুলাইয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বোলসোনারো। টানা তিন সপ্তাহ ভোগার পর সুস্থ হন তিনি।
এর আগে করোনা মহামারিকে কোন গুরুত্ব না দেয়ায় দেশটিতে ভয়াবহ তাণ্ডব চালাতে থাকে ভাইরাসটি। যার খেসারত এখনও দিচ্ছে ব্রাজিলের মানুষ। এখন পর্যন্ত লাতিন আমেরিকার দেশটিতে ৭১ লাখ ৬৪ হাজার মানুষ করোনার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ রোগী কোন ভ্যাকসিন ছাড়াই সুস্থতার লাভ করলেও প্রাণহানি ঘটেছে ১ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি ভুক্তভোগীর।