তানভীরুল ইসলাম >>
আউটসোর্সিং বর্তমান সময়ের একটি সেরা পেশা। খুব কম সময়ে বেশি আয় করা আউটসোর্সিংয়ের মূল সুবিধা। তবে একজন সফল ফ্রীলান্সার হতে হলে আপনাকে আপনার দক্ষতার পাশাপাশি যোগ্যতাও প্রমাণ করতে হবে। আরও কয়েকটি গুণ আপনার থাকতে হবে যেমন, পরিশ্রম করার মন মানুষিকতা, আত্মবিশ্বাস, ধৈর্যশীলতা এবং সততা। তাহলেই ভালো করা সম্ভব।
আউটসোর্সিং কী?
আউটসোর্সিং তথা ফ্রিল্যান্সিং শব্দের মূল অর্থ হল মুক্ত পেশা। অর্থাৎ মুক্তভাবে কাজ করে আয় করার পেশা। আর একটু সহজ ভাবে বললে, ইন্টারনেটের ব্যাবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের কাজ করিয়ে নেয়। নিজ প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কাউকে দিয়ে এসব কাজ করানোকে আউটসোর্সিং বলে। যারা আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে দেন, তাঁদের ফ্রিল্যান্সার বলে।
আউটসোর্সিং সাইট বা অনলাইন মার্কেট প্লেসে কাজগুলো বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা থাকে। যেমন: ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও তথ্যব্যবস্থা (ইনফরমেশন সিস্টেম), লেখা ও অনুবাদ, প্রশাসনিক সহায়তা, ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া, গ্রাহকসেবা (Customer Service), বিক্রয় ও বিপণন, ব্যবসাসেবা ইত্যাদি।
আউটসোর্সিং করতে যা যা লাগবে:
১. কম্পিউটার / ল্যাপটপ,
২. ইন্টারনেট কানেকশন / মডেম,
৩. কিছু কাজের দক্ষতা,
৪. যথেষ্ট সময়।
ভেবে দেখুন আপনার কী কী আছে। ১, ২ ও ৪ নম্বর সবার থাকে কিন্তু ৩ নম্বর টা সবার না ও থাকতে পারে। সেজন্যই দরকার নিজেকে দক্ষ করে তোলা। উপরের ৪ টি জিনিস নিশ্চিত হতে পারলে চলুন আরো সামনে এগিয়ে যাই. . .
এবার যে কোন একটি মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলুন। অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আপনার ব্যাক্তিগত ঠিকানা, ইমেইল, ফোন নম্বর ইত্যাদি সঠিকভাবে পূরণ করবেন। অ্যাকাউন্ট খোলার পর আপনার প্রোফাইলে গিয়ে একটি সিভি তৈরী করতে হবে। সেখানে উল্লেখ করতে হবে যে আপনি কোন কোন কাজে দক্ষ এবং আপনার চাহিদা কেমন। সেখানে আপনার ওয়েবসাইটের লিংকও দিতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার প্রোফাইল কত যত সুন্দর ও আকর্ষণীয় হবে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি থাকবে। তাই যতটা সম্ভব প্রোফাইলকে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করবেন। প্রোফাইল এমন ভাবে তৈরী করবেন যেন ক্লায়েন্ট আপনার প্রোফাইল দেখেই আপনার উপর ভরসা করতে পারে।
প্রোফাইল তৈরী করা শেষ হয় গেলে এবার সাইট গুলোতে একটু ঘুরে ঘুরে দেখেন। অ্যাকাউন্ট খোলার প্রথম কয়েকদিন কাজের জন্য প্রস্তাব করবেন না। বিশেষ করে ১ম ৪-৫ দিন সাইটের বিভিন্ন ফিচারগুলো দেখে নিতে পারেন। সাইটের নিয়ম কানুন, সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি ভালো করে দেখে নিন। এতে পরে কাজ করতে সুবিধে হবে।
তারপর আস্তে আস্তে প্রস্তাব করা শুরু করুন। প্রথম অবস্থায় কাজ পেতে একটু দেরি হয়। ১৫-২০ দিন সময় লাগতে পারে। তাই ধৈর্য সহকারে প্রস্তাব করে যেতে হবে। যখন প্রথম ২-৩টি কাজ ভালো ভাবে শেষ করতে পারবেন, তখন আপনাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। তখন ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজের জন্য খুজবে।
যা জানা জরুরি:
কাজ করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন। আপনাদের সুবিধার্থে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিচে আলোচনা করা হলো।
১. রেটিং/ফিডব্যাক:
কোনো কাজ শেষ করার পর ক্লায়েন্ট কাজ রিভিউ করার পর কাজের দক্ষতা ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে আপনাকে একটি ১-৫ এর মধ্যে একটি ফিডব্যাক দিবে। এই ফিডব্যাক আপনার প্রোফাইল জব হিস্ট্রিতে সবাই দেখতে পারবে। আপনার ফিডব্যাক দেখেই অন্য ক্লায়েন্ট বুঝতে পারবে ওই কাজের উপর আপনার দক্ষতা কতটুকু। তাই যতটা সম্ভব ভালো কাজ করার মানুষিকতা থাকতে হবে। ৪.৫-৫ রেটিং ফিডব্যাক রাখার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই পরবর্তিতে কাজের জন্য চিন্তা করতে হবে না।
২. র্যাংকিং:
মার্কেটপ্লেসগুলুতে ফ্রীলান্সারদের একটি র্যাংকিং থাকে। যখন কোনো ক্লায়েন্ট তার কজের জন্য ওই সাইটের ফ্রীলান্সার খুঁজে তখন এই র্যাংকিং হিসেবেই ফ্রীলান্সারদের লিস্ট শো করে। আপনার র্যাংকিং যদি খারাপ হয় থাকে তাহলে আপনাকে সার্চ এ সবার শেষে দেখাবে। রেন্ট-এ-কোডার এ আপনার গড় রেটিং, সর্বমোট কত টাকার কাজ সম্পন্ন করেছেন এবং কত ঘন্টা কাজ করেছেন তা দিয়ে আপনার অবস্থান নির্ধারিত হয়। র্যাংকিং ও রেটিংয়ের মত কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. কাজের সময়সীমা:
কাজ শেষে করার জন্য ক্লায়েন্ট একটি নির্দিষ্ট সময় দিয়ে দেয়। একেই বলে ডেডলাইন বা কাজের সময়সীমা। কাজ যথা সম্ভব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে চেষ্টা করবেন। কখনো যদি মনে হয় কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারবেন না, তখন কাজ শুরু করার আগেই ক্লায়েন্টকে জানান। যদি সময় মত কাজ জমা দিতে না পারেন তাহলে হয়ত আপনি কোনো পেমেন্টই পাবেন না এবং ক্লায়েন্ট আপনাকে একটা বাজে রেটিং/ফিডব্যাক দিতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।
আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান:
আউটসোর্সিং আয়ে বাংলাদেশ ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। কম খরচ ও ঝুঁকি বিবেচনায় ইউরোপ-আমেরিকা তথা উন্নত বিশ্বের অনেক বড় কোম্পানি এখন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে আউটসোর্সিং করছে। এতে বাংলাদেশ হয়ে উঠছে ফ্রিল্যান্সিং কর্মসংস্থানের বড় উৎস। ফ্রিল্যান্সিং কাজের মধ্যে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে ওয়েব ডিজাইন, কর প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ ও সার্চ ইঞ্জিন ওপটিমাইজেশনসহ অনেক কাজই রয়েছে। বৈশ্বিক বাজারে ফ্রিল্যান্সিং হয়ে উঠেছে অনেক বাংলাদেশির পছন্দের ক্যারিয়ার।
এ দেশের তরুণ-তরুণীদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং অনেক সহজ হয়ে গেছে।
অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট- ওআইআই’র তথ্যমতে, অনলাইন শ্রমিক সরবরাহে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। বর্তমানে এ দেশের নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার রয়েছে ছয় লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ নিয়মিত কাজ করছে।
বাংলাদেশের আইসিটি ডিভিশনের তথ্য অনুযায়ী, তারা বার্ষিক ১০ কোটি ডলার আয় করছে। অনলাইন শ্রমিক সরবরাহে বিশ্বের শীর্ষ দেশ ভারত। বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্সার শ্রমিকের ২৪ শতাংশই ভারতের, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার বিশ্বের ১৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিল্যান্সার ১২ শতাংশ। একেক দেশ একেক ধরনের আউটসোর্সিং কাজে গুরুত্ব দিচ্ছে।