দেশে এখন অসংখ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতই উপযুক্ত লোক নিয়োগ হচ্ছে। যেমন- হাসপাতাল, নার্সিং কলেজ, কর্পোরেট অফিস, ফ্যাক্টরী, শিপিং এজেন্সি, হোটেলসহ এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশিই। তাই এসব চাকরির ক্ষেত্রে আগ্রহটাও বেশি।
কিন্তু জানা নেই কীভাবে এসব চাকরির জন্য তৈরি করতে হবে নিজেকে; কী কী বিষয় দেখা হয় এসব চাকরির ক্ষেত্রে। আর এই জানার অভাবেই এসব চাকরি অনেকটা হাতছাড়াই হয়ে যাচ্ছে। আজ ক্যারিয়ার আলোচনায় থাকছে এসবই-
ধরণ এবং উদ্দেশ্য
আগেই জানতে হবে প্রতিষ্ঠানটির ধরণ কী, এর কাজ কী এবং এর উদ্দেশ্য কী? এনজিওগুলো সাধারণত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে। মানুষের মৌলিক অধিকার যেমন— খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিতসা প্রভৃতি। তেমনি ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর উন্নয়ন, পরিবেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন কর্মসূচি, ক্ষুদ্রঋণ, এইডস, যক্ষা, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি ও বিভিন্ন গবেষণা পরিচালনার জন্য কাজ করে।
অনেক এনজিওর কাজ বিশেষ এলাকাভিত্তিক হয়ে থাকে। কিছু এনজিও বিশেষ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করে। যেমন- প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী, পথশিশু, শ্রমজীবী শিশু, নির্যাতিতা নারী প্রভৃতি। আর কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, ফ্যক্টরীতে বেশীরভাগই ক্ষেত্রে হেলথ এন্ড সেইফটি বিষয়টা দেখা হয়। এছাড়া কিছু গবেষণা কেন্দ্রিক কাজও হয়ে থাকে।
হাসপাতালগুলোতে আইপিসি, স্পেশালাইজ ইউনিট, ক্রিটিক্যাল কেয়ারসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে কাজ করা যায়। আর কলেজগুলোতে পাঠদান, প্রশাসনিক কাজ করার সুযোগ আছে।
কোথায় কেমন সুযোগ
এনজিওগুলোতে বিভিন্ন বিভাগে কাজের সুযোগ রয়েছে। যেমন— গবেষণা, উন্নয়ন, প্রোগ্রাম, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগ। এসব প্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষ সবাই সমান সুযোগ পেয়ে থাকে। তবে মাঠপর্যায়ে নারীদের সঙ্গে কাজ করার জন্য সাধারণত নারীকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিবছর এসব প্রতিষ্ঠানে মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনেক কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়।
আর হাসপাতালগুলোতে সুযোগ আছে সাধারণ সেবা খাত, বিশেষায়িত বিভাগ, আইপিসি, প্রশাসনিক বিভাগে কাজ করার।
কোন পদে কী যোগ্যতা
একজন নার্স হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে আপনাকে বেসিক নার্সিং কোর্স, যেমন- ডিপ্লোমা বা বিএসসি ইন নার্সিং ডিগ্রি থাকতে হবে। সঙ্গে নার্সিং কাউন্সিলের হালনাগাদ রেজিষ্ট্রেশন। এছাড়া উচ্চতর ডিগ্রি বা শর্ট কোর্স, যেমন- CPR, ERTC, ATLS, OET-এগুলো থাকলে ভালো। অনেক এনজিওতে ইংরেজি ও তথ্যপ্রযুক্তিগত দক্ষতা চাওয়া হয়। অনেক এনজিওর কার্যক্রম আছে বিদেশেও। তবে প্রশাসনিক ও শিক্ষকতার ক্ষেত্রে মাস্টার্স বা সমমান ডিগ্রি থাকলে ভালো।
ইংরেজি জানা থাকলে বিদেশেও পাঠানো হতে পারে। কম্পিউটারে দক্ষতার ক্ষেত্রে প্রয়োজন এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারটাও জানতে হয়।
অভিজ্ঞতা যখন বাধা
অভিজ্ঞতা একটি বড় বিষয়। মূলত অভিজ্ঞতার আলোকেই অধিকাংশ নিয়োগ হয়ে থাকে। অভিজ্ঞতার জন্য বিভিন্ন এনজিওতে ইন্টার্নশিপ করা যায়। ইন্টার্নশিপের সুযোগ আছে জাতিসংঘ, আইসিডিডিআরবি, সিআরপি, ব্র্যাক, অ্যাকশনএইড, আশা, মুসলিমএইড, কেয়ারসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে। বিনা বেতনে কাজ করার বিনিময়ে অভিজ্ঞতার সনদ দেয় অনেক এনজিও। বিভিন্ন জব সাইট ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে। ছাত্রাবস্থায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সেটিও বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়।
নিয়োগ প্রক্রিয়া
প্রতিষ্ঠানগুলো জবসাইট ও দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয় বিজ্ঞপ্তি। সরাসরি, মেইল বা ডাকযোগে সিভি পাঠাতে হয় প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগ বরাবর। বিজ্ঞপ্তি না থাকলেও নিজ উদ্যোগে সিভি জমা দিতে পারেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে কর্মী বাছাই করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় যারা সিভি জমা দেন, তাদের মধ্যে থেকেও নিয়োগ দেওয়া হয়।
সুযোগ-সুবিধাসমূহ
দেশীয় প্রতিষ্ঠান এন্ট্রি লেভেলের নার্সদের বেতন ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত খরচ, উৎসব ভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও বীমা সুবিধা পান কর্মীরা। শুরুতে বেতন কম থাকলেও পরবর্তীকালে পদোন্নতির সাথে সাথে বাড়তে থাকে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। বেশিরভাগ এনজিওতে সময়ভিত্তিক না হয়ে পদোন্নতি দেওয়া হয় পারফরম্যান্স ভিত্তিক। তাই সারা বছর ধরে চলে কর্মীদের কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ও নির্দিষ্ট নীতিমালার ওপর বেতনকাঠামো নির্ভর করে। দক্ষতার সঙ্গে ৩-৪ বছর কাজ করতে পারলে আন্তর্জাতিক বা শীর্ষস্থানীয় জাতীয় সংস্থাগুলোতে ভালো বেতনে চাকরি পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোতে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন হতে পারে।
মনে রাখবেন আপনার কর্মদক্ষতা নির্ধারণ করবে আপনার বেতন ভাতা।