মাত্র ছয় দিনের ব্যবধানে বসে গেছে পদ্মা সেতুর ৩৪তম স্প্যান। আজ সকালে ‘২এ’ নামের এই স্প্যানটি মাওয়া প্রান্তের ৭ ও ৮ নম্বর খুঁটির ওপর সফলভাবে স্থাপন করা হয়েছে। এতে করে সেতুর ৫ হাজার ১শ’ মিটার দৃশ্যমান হলো।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের জানান, শনিবার বিকেল ৪টায় মাওয়ার কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে বিশেষায়িত ক্রেন ‘তিয়ান ই’ স্প্যান নিয়ে নির্ধারিত পিলারের দিকে রওয়ানা হয়। প্রায় ২ কিলোমটার পথ পাড়ি দিয়ে মাঝ নদীতে ৭ ও ৮ নম্বর পিলারের কাছে যখন ক্রেনটি পৌঁছে, ততক্ষণে দিনের আলো শেষ প্রায়।আলোর স্বল্পতার জন্য সে সময়ে স্প্যানটি স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ভাসমান স্প্যানবাহী জাহাজটি ৭ ও ৮ নম্বর খুঁটির কাছে নোঙ্গর করা হয়। আজ সকাল থেকে স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হয়। পরে স্প্যানটি যথাস্থানে প্রেস করে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে বসিয়ে দেয়া হয় খুঁটির ওপর।
৩৩তম স্প্যান বসানোর মাত্র ৬ দিনের মাথায় আজ বসানো হলো ৩৪তম স্প্যানটি। এর আগে গত ১৯ অক্টোবর ৩ ও ৪ নম্বর খুঁটির ওপর ৩৩ নম্বর স্প্যানটি এবং ১১ অক্টোবর ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটির ওপর ৩২ তম স্প্যানটি স্থাপন করা হয়। চলতি মাসে এ পর্যন্ত তিনটি স্প্যান খুঁটির ওপর স্থাপন করা হলো। আগামী ৩০ অক্টোবর মাওয়ায় পদ্মা তীরে ২ ও ৩ নম্বর খুঁটির ওপর ৩৫তম স্প্যান স্থাপন করার কথা রয়েছে। অপর ৬টি স্প্যান এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সবগুলো স্প্যান খুঁটির ওপর উঠে যাবে।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল পদ্মা সেতুতে মোট ৪২টি খুঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ২১টি ও জাজিরা প্রান্তে ২১টি। আর এই ৪২টি খুঁটির ওপর স্প্যান বসবে ৪১টি ।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হলো ৩৩টি স্প্যান। প্রতিটি স্পেনের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে সবকটি খুঁটি এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে।
মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। বহুমুখী এ সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ২০২১ সালেই যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।