চিরনিদ্রায় শায়িত ব্যারিস্টার রফিক-উল হক

মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

 

 

১০৬ বার দেখা হয়েছে

রাজধানীর বনানী কবরস্থানে স্ত্রী ডা. ফরিদা হকের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক।

শনিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর ২ টা ১৫ মিনিটে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে তার জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

এতে ইমামতি করেন সুপ্রিমকোর্ট জামে মসজিদের খতিব। জানাজায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম এমপি, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু এমপি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস, এটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ, এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণ, সিনিয়র আইনজীবী, সুপ্রিমকোর্ট বার কার্যনির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী, স্বজন শুভাকাঙ্খী জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে তার মরদেহ দাফনে বনানী কবরস্থানে নেয়া হয়।

আজ শনিবার ২৪ অক্টোবর সকাল সাড়ে আটটার দিকে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক মারাা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি রাজিউন)। রাজধানীর মগবাজারের আদ্-দ্বীন হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় আদ্-দ্বীনে সকাল সাড়ে দশটায়। এরপর নিজ বাসা পল্টনে নেয়া হয় রফিক-উল হকের মরদেহ। বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

সুপ্রিমকোর্টে জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, এটর্নি জেনারেল কার্যালয়, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, সুপ্রিমকোর্ট বার, ল’ রিপোর্টার্স ফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।

আইন পেশায় ৬০ বছর পার করা এই আইনজীবী দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা এটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। দেশের আলোচিত অনেক মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক।

নিজের প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে দেশের উচ্চ আদালতকে সহযোগিতা করতে অনেকবার হয়েছেন (অ্যামিকাস কিউরি) আদালতের বন্ধু। দেশের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবীর সান্নিধ্যে এসে আইন পেশায় সফল হয়েছেন অনেকেই।

দেশের প্রথিতযশা এই আইনজীবী নিজের উপার্জিত অর্থের একটা বড় অংশই ব্যয় করেছেন সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডে। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠা করেছেন বেশ কয়েকটি হাসপাতাল, এতিমখানা, মসজিদ ও মেডিক্যাল কলেজ। এছাড়া যেখানে সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মানবতার সেবায়।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুমিন-উল হক পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। আর মা নূরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। কলকাতার সুবর্ণপুরেই রফিক-উল হকের শৈশব ও কৈশোর কাটে।

১৯৫১ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ১৯৫৭ সালে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এই সময়ে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে পর পর দু’বার সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে এলএলবি পাস করে পরবর্তীকালে আইনজীবী হিসেবে কলকাতা হাইকোর্টে পেশাজীবন শুরু করেন।

১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বার-এট-ল করে চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৬৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগে সিনিয়র আইনজীবী হন রফিক-উল হক। তার একমাত্র ছেলে ফাহিমুল হক একজন ব্যারিস্টার। এর আগে ২০১১ সালে রফিক-উল হকের চিকিৎসক স্ত্রী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

আরো পড়ুন