‘ট্রাম্পের মাধ্যমে করোনা ঝুঁকি নেই’

মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

 

 

৮৩ বার দেখা হয়েছে

হোয়াইট হাউজের চিকিৎসক বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাধ্যমে অন্যদের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আর কোন ঝুঁকি নেই। বৃহস্পতিবারের পর এই প্রথম ট্রাম্পের শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরলেন চিকিৎসক সিন কনলি।

এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তিন দিন হাসপাতালে থেকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতাল ছেড়ে চলে আসার পরেও তার মাধ্যমে এই ভাইরাসটি অন্যদের মধ্যে ছড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছিল।

তবে চিকিৎসক শন কনলি যে বিবৃতি দিয়েছেন সেখানে ট্রাম্পের টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ এসেছে কীনা সেটা বলা হয়নি। আর তিন সপ্তাহ পরেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভোট হবে ৩রা নভেম্বর। সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে জাতীয়ভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের চেয়ে ১০ পয়েন্টে পিছিয়ে রয়েছেন।

তবে কিছু কিছু রাজ্যে, যেগুলো নির্বাচনী ফলাফলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে এই ব্যবধান কমে আসছে। জো বাইডেন পেনসিলভানিয়াতে এগিয়ে আছেন সাত পয়েন্টে, ফ্লোরিডাতে তিন দশমিক সাত পয়েন্টে, ওহাইওতে এক পয়েন্টেরও কম ব্যবধানে। রিয়াল ক্লিয়ার পলিটিক্স নামের একটি সংস্থা এসব জরিপ সমন্বয় করেছে।

ডাকযোগে ভোট নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল সেটা এখনও কাটেনি। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কিছু রাজ্য পোস্টাল ভোটিং এর সময় আরো বাড়াতে চায়। আর ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন যে ডাকযোগে দেওয়া এসব ভোট নিয়ে জালিয়াতি হতে পারে।

এবিসি নিউজের এক জরিপে জানা যায় মাত্র ৩৫% আমেরিকান মনে করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সঠিকভাবে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে দুই লাখ ১৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

ডাক্তার শন কনলির চিকিৎসা-পত্রে বলা হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সবশেষ যে পরীক্ষা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে “তার দেহে ভাইরাসটি সক্রিয় থাকার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি,” এবং এর ফলে তার শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ “কমে যাচ্ছে।”

ড. কনলি বলেছেন, ল্যাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন স্পর্শকাতর পরীক্ষা চালানো হয়েছে যাতে তার দেহে এখনও কী পরিমাণে ভাইরাস সক্রিয় রয়েছে সেটা জনা যায়। এই টেস্টের ফলাফল দেখে বলা যায় তিনি যে অন্যদের শরীরেও এই ভাইরাসটি ছড়াতে পারেন এমন কোন ঝুঁকি নেই।

ট্রাম্পের দেহে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ প্রথম দেখা দিতে শুরু করে দশ দিন আগে। তার একদিন পর তাকে ওয়াল্টার রিড মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা করা হয়। অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে তাকে স্টেরয়েড ডেক্সামেথাসোনও দেওয়া হয়। করোনাভাইরাসে কেউ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত কিম্বা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেই কেবল এই ওষুধটি দেওয়া হয়ে থাকে।

ড. কনলির এই বিবৃতির আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউজের এক অনুষ্ঠানে তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন যে তিনি “দারুণ ভাল” বোধ করছেন। ট্রাম্প আরাও জানান যে তিনি করোনাভাইরাসের ওষুধ গ্রহণও বন্ধ করে দিয়েছেন।

এই সমাবেশটি নিয়েও অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

কেন এই উদ্বেগ
হোয়াইট হাউজের সামনে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে কয়েকশো লোক উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানের যেসব ছবি প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে লোকজন সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছেন।

হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছে যারা এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তাদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদেরকে একটি প্রশ্নপত্রও পূরণ করতে হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদেরকে মুখে মাস্ক পরে আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সবাই এই নির্দেশনা অনুসরণ করেনি।

ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান এডাম শিফ এই সমাবেশের সমালোচনা করে বলেছেন, “করোনাভাইরাস বেশি করে ছড়িয়ে পড়তে পারে হোয়াইট হাউজে এমন একটি সুপার-স্প্রেডার সমাবেশের আয়োজন করে প্রেসিডেন্ট নৈতিক দেউলিয়াপনার পরিচয় দিয়েছেন।”

এর আগে ২৬শে সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউজে আয়োজিত আরেকটি অনুষ্ঠানের পর তাতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ অন্তত ১১ জনকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রামক রোগ বিষয়ক শীর্ষস্থানীয় একজন বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি ওই সমাবেশকে একটি “সুপার-স্প্রেডার অনুষ্ঠান” বলে উল্লেখ করেছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচারণা দল থেকে বলা হয়েছে আগামীকাল সোমবার ফ্লোরিডায় বড় আকারের একটি সমাবেশে তার উপস্থিত থাকার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই রাজ্যটির ভোট অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

জো বাইডেন কী করছেন?
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন পেনসিলভানিয়াতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনে এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। সেখানে তিনি বলেছেন করোনাভাইরাসে যারা তাদের প্রিয়জন হারিয়েছেন সেসব পরিবারের প্রতি তিনি সমব্যথী।

বাইডেন বলেছেন তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরেও ট্রাম্প সমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন। মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর ভূমিকা গ্রহণ না করার কারণেও তিনি তাদের সমালোচনা করেছেন।

“তাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক পরা উচিত,” বলেন জো বাইডেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা

আরো পড়ুন