প্রাচ্যের সাথে পাশ্চাত্যের সংযোগে বাংলাদেশ আদর্শ জায়গা হতে পারে: প্রধানমন্ত্রী

মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

 

 

১১৮ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘প্রাচ্যের সাথে পাশ্চাত্যের সংযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব থেকে একটা আদর্শ জায়গা হতে পারে, যদি আমরা একে সেভাবে উন্নত করতে পারি।’

জাতির পিতা বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড (সুইজারল্যান্ড অবদি ইষ্ট) হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন বলেও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক এয়ার রুটের মধ্যে থাকায় আমাদের সে সম্ভাবনাটা রয়েছে। যদি আমরা সেটাকে কাজে লাগাতে পারি তাহলে এয়ারলাইন্সই আমাদের অনেক টাকা উপার্জন করে দিতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিমান পরিবহন চুক্তির উল্লেখ করে বলেছেন, তাঁর সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ স্থাপনের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিমানের নিরাপত্তা এবং সেবা বৃদ্ধিতে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী যথাযথভাবে আইনগুলো প্রণয়ন করে সেই আইনও আমরা পাশ করে দিয়েছি যাতে আমাদের বিমান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাঠাতে পারি। আর অন্য দেশ থেকেও বিমান আসতে পারে। সেদিকেও আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গ্রীনরোডে নবনির্মিত ‘পানি ভবনের’ উদ্বোধনকালে এসব বলেন।

একইসঙ্গে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্মুখে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ম্যুরাল’ ও বিমানবন্দরের অভ্যন্তরস্থ ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ এবং বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের নবনির্মিত প্রধান কার্যালয় ‘পর্যটন ভবন’ উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনের মাধ্যমে নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের এয়ারলাইন্সকে কারণ আজকে দেখলাম যে, আমেরিকারর সঙ্গে একটা চুক্তি হয়েছে, যেখানে আমাদের বিমান যেতে পারবে।

বাংলাদেশ বিমানের আধুনিকায়নে তিনি আমেরিকার বোয়িং কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর এ পর্যন্ত অত্যাধুনিক ১৩টি বিমান আমাদের বিমানবহরে যুক্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বোয়িং বিমানগুলো কিনি তখন থেকেই এটা একটা প্রচেষ্টা ছিল যাতে আমেরিকায় আমাদের বিমান নিতে পারি। কারণ, সেখানে আমাদের অনেক বাঙালি বসবাস করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে বাঙালিরা থাকে (বসবাস করে) সেখানে ঢাকা থেকে সরাসরি যেন আমাদের বিমান পাঠাতে পারি। ঢাকা থেকে টরেন্টো, নিউইয়র্ক ও টোকিওসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাতে আমরা যেতে পারি সেজন্য কিছু বিমানও আমরা ক্রয় করে ফেলেছি।’ ‘কাজেই সকলের সাথে একটা সমঝোতা করে এই শিল্পটাকে আমাদের আরো উন্নত করতে হবে, এবং এই যোগাযোগটাকেও বাড়াতে হবে সেজন্যই আমরা বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছি, যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ৩০ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বিমান পরিবহন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এখন থেকে এই চুক্তি দুটি দেশের মধ্যে বিমান চালনা পুনরায় শুরু করার প্রাথমিক ভিত্তি হিসাবে কাজ করবে। চুক্তি অনুসারে, বাংলাদেশ ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই কোড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার স্ব স্ব সরকারের পক্ষে ঢাকায় এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রী মো.মাহবুব আলী, সংশ্লিষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. এহিবুল হক এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং গ্রীন রোডস্থ নবনির্মত পানি ভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তৃতা করেন।

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এবং পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী একেএম এনামুল করিম শামীম ও পানি ভবন থেকে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

এছাড়া, সিলেট ওসমামী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সম্পর্কিত একধিক ভিডিও চিত্র অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা আর সেটিকে অব্যাহত রাখেননি।
‘কমিশনবাজি আর নিজেদের পকেট ভারি করাই তাদের উদ্দেশ্য থাকায় বিমানের আর অগ্রগতি হয়নি’- এমন অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, প্রথমবার ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালিনই তাঁর সরকার চট্টগ্রামে বিমানবন্দর তৈরি করে সেটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করে। সেইসাথে সিলেট বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করাসহ ঢাকার বিমানবন্দরে বোর্ডিং ব্রীজ থেকে শুরু করে কার পার্কিং নির্মাণ করে। কারণ ’৯৬ সালে বিমানবন্দরে কোন বোর্ডিং ব্রীজ না থাকায় সেসময় বিমানে পায়ে হেঁটে গিয়ে চড়তে হত, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের বিমান এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের প্রসংগ টেনে বলেন, ‘সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার এবং সিলেট, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আরও উন্নত করার প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। যাতে নেপাল, ভূটান এবং ভারতসহ পাশ্ববর্তী দেশগুলো ব্যবহার করতে পারে এবং পর্যটনের একটা বিশাল সম্ভাবনা উন্মুক্ত হয়।’ সঙ্গে বরিশাল এবং বাগেরহাটের খানজাহান আলী বিমানবন্দর সহ আভ্যন্তরীন রুটের বিমানবন্দরগুলোও নতুন করে চালু করা হয়েছে, বলেন তিনি।

এভাবেই নৌপথ, সড়ক পথ, রেল পথ এবং আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে তাঁর সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা যত সহজ হবে তত দেশের অর্থনীতি গতিশীলতা পাবে, উন্নত হবে। পাশাপাশি মানুষের যাতায়াত ও সহজ হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন রেলপথ সৃষ্টি এবং সংস্কার এবং রেলের সংখ্যা বৃদ্ধি ও রেলপথের উন্নয়নের মাধ্যমেও দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করছে তাঁর সরকার।
জেট ফুয়েল যাতে সরাসরি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আসতে পারে সেজন্য পাইপলাইন নির্মাণের কাজ এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজও তাঁর সরকার শুরু করেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

রাজধানীর গ্রীণরোডে প্রায় ২৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ তলা-বিশিষ্ট নবনির্মিত ‘পানি ভবনের’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ভবনের যখন নামকরণ করি তখন বলেছিলাম পানি ভবনে যেন পানি থাকে। জলাধার থাকে এবং মূল পরিকল্পনা ও নকশাটি সেভাবেই করা হয়েছে।’

জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় নতুন জলাধার সৃষ্টি এবং বিদ্যমান জলাধারগুলোতে পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে পূর্ববর্তী সামরিক সরকারগুলোর বিরুদ্ধে দেশের জলাধার ধ্বংস করারও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান পানি ভবনের কাছে পান্থপথে এক সময় বিরাট বিল থাকলেও সেখানে কোন জলাধার না রেখে বক্স কালভার্ট করারও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।

তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে যত খাল, বিল, হাওর, পুকুর, নদী যা আছে সবগুলোর যাতে নাব্যতা থাকে, সেগুলো খনন করা, সেখানে পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে।
তাতে আমাদের জীববৈচিত্র রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা এবং মৎস্য উৎপাদনও বাড়বে। সাথে মানুষের চহিদাটাও আমরা পূরণ করতে পারবো, বলেন তিনি।
জলাধার বাড়ানোর পাশাপাশি মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়ে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘যে পানির জন্য এক সময় হাহাকার ছিল সেই হাহাকারটা বন্ধ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য আমাদের দেশের মানুষকে সুপেয় পানি দিতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের আওতায় এসেছে। ঢাকা শহরে পানির সমস্যা দূর করতে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
ভূ-গর্ভস্থ পানির পরিবর্তে ভূ-উপরস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিতে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা গবেষণার ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘গবেষণা ছাড়া কোনো কাজেই উৎকর্ষতা সম্ভব না।’

এক্ষেত্রে দেশের নদীগুলো ড্রেজিং এবং নাব্যতা বৃদ্ধিতে সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের যেখানে স্থাপনা নির্মাণ হোক না কেন সেখানে যেন অন্তত বৃষ্টির পানি যাতে সংরক্ষণ করা যায় সেজন্য যেন জলাধার থাকে সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে।

তিনি বলেন, তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী স্থাপনা তৈরি হলে আমাদের পরিবেশটাও যেমন সুন্দর থাকবে তেমনি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর যেটি কমে যাচ্ছে, সেটিও আর কমে যাবেনা। দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি গণস্বাস্থ্যের জন্যও উপযোগী হবে।

তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিল বলেই আজকে করোনার মধ্যেও তাঁর সরকার গতিশীল রয়েছে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে এবং সেগুলো জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে পারছে-এমন অভিমত ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা নির্মিত এবং নির্মাণাধীন স্থাপনাগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের পরামর্শ দেন। তিনি নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলোর কাজ যথাসময়ে এবং যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্যও এ সময় সংশ্লিষ্ট মহলকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

আরো পড়ুন