ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে

সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

 

 

১১০ বার দেখা হয়েছে

ধর্ষণের সাজা যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ড করায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দেশ ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন আইনজীবীরা।

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। এটি এখন অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। এ বিষয়ে কথা বলেন, সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. কাজী আকতার হামিদ, মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস্ এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট এডভোকেট মনজিল মোরশেদ এবং আইনজীবী জে আন খান রবিন।

এই তিন আইনজীবীই মনে করেন, ধর্ষণের সাজা যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ড করায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব (পজিটিভ ইমপ্যাক্ট) পড়বে। সাজা বৃদ্ধি করে আইনে সংশোধন আনায় অপরাধীদের মধ্যে ভীতি কাজ করবে এবং এতে করে অপরাধের হার কমবে।

ড. কাজী আকতার হামিদ বলেন, মৃত্যদণ্ডের সাজা করায় নিঃসন্দেহে দেশে পজিটিভ ইমপ্যাক্ট পড়বে। তবে সাজা বৃদ্ধি হওয়ায় যেন কেউ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন‘ উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউকে হয়রানি করতে ব্যবহার না করতে পারে সেদিকেও সংশ্লিষ্টদের নজর রাখতে হবে। সিনিয়র এ আইনজীবী বলেন, বিদ্যমান এ আইনে মিথ্যা মামলা রুজু করার একটা প্রবণতাও রয়েছে। 

এইচআরপিবি প্রেসিডেন্ট এডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, ধর্ষণের সাজা যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ড করায় মানসিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে অন্যান্য যে অনুঘটকগুলো রয়েছে সেদিকেও নজর দিতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে সূযোগ দিতে হবে। 

এডভোকেট জে আর খান রবিন বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দমন এবং ভিকটিমের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বিদ্যমান আইনের এ সংশোধনী সরকারের উদ্যোগ প্রশংসার দাবী রাখে। তিনি বলেন, অপরাধীকে অন্য কোন বিবেচনায় নয়, সবসময় অপরাধীর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। মামলা প্রমাণ এবং পক্ষদ্বয়ের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে প্রশাসন, আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রভাবমূক্ত থেকে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি তার রাজধানীর গুলশানের বাসায় আজ এক ব্রিফিং-এ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এ সংশোধন। বিদ্যমান এই আইনের ৯ (১) উপধারায় যেখানে ধর্ষণের সাজা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ছিল, সেখানে উপধারা (৪)-এর দফা (ক)-এর ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড’ শব্দ সংযোজন করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, সংশোধনের পর ধর্ষণের শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এখন ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, ইত্যাদির শাস্তি ধারা ৯ (১) যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন।

ব্যাখ্যা- যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল (১৬) বৎসরের অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা ষোল (১৬) বৎসরের কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।

ধারা ৯ (৪) যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে (ক) ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন; (খ) ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ (১০) বৎসর কিন্তু কমপক্ষে পাঁচ (৫) বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন।

আইনমনন্ত্রী আজ বলেন, বিদ্যামন এই সংশোধনে আইনে ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, ইত্যাদির শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করতে খসড়াটির চূড়ান্ত অনুমোদন মন্ত্রিসভায় দেয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন