ক্ষমতায় থাকার সব রকমের অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে হেরে যাওয়া স্টেট গুলোতে পুনর্গণনা, তার সমর্থকদের দায়ের করা মামলা আদালতে খারিজ, সিনেটরদের নির্বাচনে ফল ফাল্টানোর অনুরোধ, তার আমন্ত্রনে আসা সমর্থকদের ক্যাপিটল ভবন দখল, হামলা-ভাংচুরসহ সব রকমের হীন চেষ্টার পর অবশেষে পরাজিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জয় হয়েছে গণতন্ত্রের। কিন্তু তার অসৎ মানসিকতার কারণে বিগত ২২০ বছরের আমেরিকার গণতন্ত্রের সৌন্দর্যের ইতিহাসে কালিমা লেপন করেছেন তিনি। কালো অধ্যায় হিসাবে লিপিবদ্ধ থাকবে ৬ জানুয়ারির ঘটে যাওয়া ঘটনার দিনটি। এমনি মন্তব্য করছেন আমেরিকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নিয়ম অনুযায়ী নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জোবাইডেন শপথ গ্রহন করার কথা রয়েছে আগামী ২০ জানুয়ারি। সে অনুযায়ি ট্রাম্পের হাতে আরো ১৩ দিন ক্ষমতা রয়েছে। এই তের দিনে ট্রাম্প যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সদস্য ও সিনেটরগণ। আগে ভাগে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার কথা উঠেছে।
৬ জানুয়ারি বুধবার দুপুরে ট্রাম্পের সমর্থকরা হামলা চালিয়ে কংগ্রেস ক্যাপিটল ভবনে ডুকে পড়েন। তাদের উদ্দেশ্যে ছিল কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন বানচালের। কিন্তু আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সিনেটর এবং কংগ্রেস সদস্যদের নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে নেন। যৌথ সদস্যদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ফাঁকে অধিবেশন স্থলে মূল ফটকে চলে যান ট্রাম্প সমর্থকরা। সেখানে ঢুকে তারা ইচ্ছামত আসবাব পত্র ভাংচুর করে তান্ডব চালায়। হামলার ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন নারী সদস্যও রয়েছেন। হামলার ঘটনায় ওয়াশিংটন ডিসিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৫২ জনকে। কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন ৬ ঘন্টার জন্য স্থগিত করা হয়। পরে অধিবেশন পুনরায় চালু করা হয়। মধ্যরাত পর্যন্ত অধিবেশন শেষে জোবাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঘোষনা দেয়া হয়।
ট্রাম্প বরাবরের মতই নির্বাচনে কারচুপি অভিযোগ আনেন। ভোট ডাকাতি করে তাকে নির্বাচনে হারিয়ে দেয়া হয়েছে মর্মে অভিযোগ করে আসছেন। একই কথা বলে টুইটার, ফেসবুকে ভিডিও বার্তা দেন।
ট্রাম্পের অসংলগ্ন আচরণ এবং অনবরত মিথ্যাচারের কারণে টুইটার ফেসবুক কতৃপক্ষ তার একাউন্ট বন্ধ করে দেন। একই ধরনের মিথ্যা ভাষন দান কালে সম্প্রতি কয়েকটি টিভি চ্যানেল তার সরাসরি বক্তব্যের সম্প্রচার বন্ধ করে দেন।
তার দলের একাধিক সিনেটর এবং কংগ্রেসম্যানও তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ট্রাম্পের অত্যান্ত ঘনিষ্ট সহযোগী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স গণতন্ত্র রক্ষায় তার কোন কিছু করার নেই বলে মন্তব্য করেন। ট্রাম্প কর্তৃক ফলাফল স্থগিত রাখার অনৈতিক আবদারও পেন্স প্রত্যাখান করেন।
ক্ষমতায় থেকে ট্রাম্পের সকল প্রকার অনৈতিক অপচেষ্টা এবং ক্ষমতাকে কুক্ষীগত করার চক্রান্ত ব্যর্থ হওয়ায় বিষয়টিকে আমেরিকার জনগন গণতন্ত্রের বিজয় হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অরাজনৈতিক লোককে দলীয় মনোনয়ন দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সকল দলের প্রতি আহবান জানান।
আমেরিকার জনগনের অনেককেই মন্তব্য করতে শোনা গেছে, কালের বির্বতনে এসব বাধা বিপত্তি আসবে কিন্তু কোন ভাবেই গণতন্ত্রকে পদদলিত করা যাবেনা।
ডেমোক্রেট দলের অপর সদস্য বলেন, আমেরিকা ইতিহাসে একজন লোভী, নির্লজ্জ, মিথ্যাবাদী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার জন্য আমরা পৃথিবীর মানুষের কাছে লজ্জিত। তার বিচার হওয়া উচিত।