হোয়াইট হাউজের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পেয়েছেন চার বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান। এরা হলেন চীফ অব স্টাফ সিনিয়র উপদেষ্টা যায়ান সিদ্দিকী, পল্লী উন্নয়ন সচিবালয়ের অধিনে প্রধান কর্মকর্তা ফারাহ আহমেদ, ইউনাইটেড স্টেট এজেন্সী ফর গ্লোবাল মিডিয়া সাত সদস্যর একজন রুমানা এবং হোয়াইট হাউজের এক্সিউটিভ অফিসের ম্যানেজমেন্ট এন্ড বাজেট ডিভিশনে ইনফরমেশন এন্ড রেগুলেটরি এফেয়ার্সের সিনিয়র কাউন্সিলর কাজী সাবিল রহমান।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের টিমে টিকতে না পারা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুমানা আহমেদ আবার হোয়াইট হাউসে ফিরেছেন। রুমানা ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়ার (ইউএসএজিম) রিভিউ প্যানেলের সাত সদস্যের অংশ হয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। রুমানা হিজাব পরায় ট্রাম্পের লোকজনের কাছে প্রায়ই অপদস্ত হতেন। তাকে কেউই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারত না। ২০১৭ সালে পদত্যাগের নেপথ্য এই কারণগুলো জানিয়ে দ্য আটলান্টিকে একটি কলাম লেখেন রুমানা। ওই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।
রুমানা জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনে যোগ দেন। ওবামার আমলে দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলে কাজ করতে থাকেন। রুমানা তার সেই আলোচিত কলামে জানান, ওবামা ক্ষমতা ছাড়লে হোয়াইট হাউসে তার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। সপ্তাহ পার হতে না হতে তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়।
তিনি বলেন, আমার কাজ ছিল দেশের সেবা করা। ওয়েস্ট উইংয়ে আমি ছিলাম একমাত্র হিজাবী। ওবামা প্রশাসন সব সময় আমাকে স্বাগত জানিয়েছে। অন্য মুসলিমদের মতো ২০১৬ সালে আমিও ট্রাম্পের কাজকর্ম দেখতে থাকি। আমি ভেবেছিলাম, দেশের জন্য তার প্রশাসনে আমার থাকা উচিত। আমি আটটা দিন টিকতে পেরেছিলাম।
রুমানা বলেন, ট্রাম্প যখন সাতটি মুসলিম-প্রধান দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন, তখনই বুঝে যাই আমার আর সময় নেই। ভাবতে থাকি, এমন একটা প্রশাসনে কাজ করি, যারা আমাকে অধীনস্ত নাগরিক মনে করে, হুমকি হিসেবে দেখে।
হোয়াইট হাউজে গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক হিসেবে নিয়োগ পেলেন জেইন সিদ্দিক। তাকে হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অব স্টাফের সিনিয়র এডভাইজার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। ১৩ জানুয়ারি নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস হোয়াইট হাউজে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে আরো কয়েকজনের সাথে জেইনের নাম ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, গত বছর ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে প্রস্তুতি টিমের মেম্বার ছিলেন জেইন সিদ্দিক। তার আগে বেটো ও’রোক’সের প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইন টিমের ডেপুটি পলিসি ডিরেক্টরও ছিলেন। তার সিনেট ক্যাম্পেইন টিমেরও সিনিয়র পলিসি এডভাইজার ছিলেন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ও ইয়েল ল’ স্কুল থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া জেইন। নিউইয়র্কে বেড়ে উঠা জেইনের কর্মজীবন শুরু হয়েছে ইউএস সুপ্রিম কোর্টের জজ ইলেনা ক্যাগন ও ইউএস কোর্ট অব আপিলের জজ ডেভিড ট্যাটেলের সাথে কাজের মধ্যদিয়ে। জেইন খ্যাতনামা ল’ ফার্ম ওরিক হেরিঙটন এ্যান্ড সাটসলিফ এলএলপি’র সহযোগী হিসেবেও কাজ করেছেন। বাইডেন-কমলা ট্র্যাঞ্জিশন টিমে ডমেস্টিক এ্যান্ড ইকনোমিক বিভাগের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায়ই এ নিয়োগ পেলেন জেইন। তার বাবা ডা: মামুন ও মা ডা: হেলেন দু’জনই নিউইয়র্কে কর্মরত।
বাইডেন প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান কাজী সাবিল রহমান (৩৮)। হোয়াইট হাউজে এক্সিকিউটিভ অফিসের ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড বাজেট ডিভিশনে ইনফরমেশন এ্যান্ড রেগুলেটরি এফেয়ার্সের সিনিয়র কাউন্সেলর হয়েছেন কাজী সাবিল। ২৫ জানুয়ারি এই নিয়োগের সংবাদ পাওয়া গেছে।
নিউইয়র্ক সিটিতে জন্মগ্রহণকারি কাজী সাবিল ব্রুকলীন ল’ স্কুলের এসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ‘ডেমজ’ নামক একটি থিঙ্ক ট্যাংকের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বর্ণ ও জাতিগত সাম্য, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি, নীতিগত গবেষণার আলোকে গণতান্ত্রিক চেতনায় সর্বসাধারণকে উজ্জীবিত করার অভিপ্রায়ে কর্মরত এই থিঙ্কট্যাংকের মাধ্যমেই কাজী সাবিলের প্রতি জো বাইডেনের দৃষ্টি প্রসারিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাইডেন-কমলা ট্র্যাঞ্জিশন টিমে আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর গভীর পর্যবেক্ষণ আলোকে সুদূর প্রসারি কর্ম-কৌশল গ্রহণের অভিপ্রায়ে কর্মরত ৮টি ওয়ার্কিং গ্রুপের একটির কো-চেয়ার ছিলেন সাবিল। এরও আগে হার্ভার্ড ল’ স্কুলে ভিজিটিং প্রফেসর, রুজভেল্ট ইন্সটিটিউটের ফেলো এবং নিউ আমেরিকানের ফেলো ছিলেন। সাবিলের গবেষণার সেক্টর হচ্ছে গণতান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থায় আর্থিক সমৃদ্ধি প্রদানের পাশাপাশি সমগ্র জনগোষ্ঠিকে উন্নয়ন আর গণতন্ত্রের ধারায় সম্পৃক্ত করে একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রয়াস। টেকসই উন্নয়নের গতিধারা ত্বরান্বিত করতে কর্মক্ষম মানুষদের উজ্জীবিত করার কাজেও সাবিলের বেশ কটি গবেষণাকর্ম ও লেখা রয়েছে।
সাবিল একইসাথে সুশাসনের জন্যে কর্মরত ‘দ্য নিউ প্রেস’র পরিচালনা পর্ষদের মেম্বার, ‘ইউনাইটেড টু প্রটেক্ট ডেমোক্রেসি’ এবং ‘দ্য ন্যারেটিভ ইনিশিয়েটিভ’রও সক্রিয় সদস্য হিসেবে মাঠে রয়েছেন। আমেরিকানদের জীবন-মানের উন্নয়ন আলোকে গবেষণামূলক তার লেখা প্রকাশিত হয় ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য আটলান্টিক, স্টানফোর্ড সোস্যাল ইনোভেমন রিভিও, বস্টন রিভিউ, ডেমোক্রেসি জার্নাল, দ্য আমেরিকান প্রসপেক্টে।
বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড থেকে সমাজবিজ্ঞান, জেডি এবং পিএইচডি করেছেন সাবিল। রোড স্কলার হিসেবে ওক্সফোর্ড থেকে এমএসসি, অর্থনীতি এবং সামাজিক বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন মেধাবি এই সাবির।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের পর ২০১৪-২০১৫ সালে নিউইয়র্ক সিটির অন্তভূক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশল সম্পর্কিত স্পেশাল এডভাইজার এবং নিউইয়র্ক সিটি রেন্ট গাইডলাইন বোর্ডেরও মেম্বার ছিলেন কাজী সাবিল। কাজী সাবিলের বাবা কাজী আফজালুর রহমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্যাডার হিসেবে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে ইকনোমিক কাউন্সেলর হিসেবে চাকরি করেছেন ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ৫ বছর। এরপর তিনি এস্কেপ-বাংলাদেশেও চাকরি করেছেন। ২০০৭ সালে অবসর নিয়ে জাতিসংঘে এস্কেপের রিজিওনাল অফিসে কাজ করেছেন এবং দু’বছর আগে পরিচালক হিসেবে অবসর নিয়েছেন। তার দু’কন্যার একজন আইএমএফ’র সিনিয়র ইকনোমিস্ট এবং অপরজন থাকেন নিউইয়র্কে। কাজী সাবিলের মা সিলেটের সন্তান সেগুপ্তা রহমান তিন মেধাবি সন্তানের জন্যেই সময় ব্যয় করেছেন এই প্রবাসে। সাবিলের চাচা কাজী ফজলুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের মেম্বার এবং আরেক চাচা কাজী গোলাম রহমানও বাংলাদেশের সচিব ছিলেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ফারাহ্ আহমেদকে বাইডেন প্রশাসনে পল্লী উন্নয়ন সচিবালয়ের অধীনে স্টাফ প্রধান করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশি ফারাহ্ আহমেদকে এ নিয়োগ দিয়েছেন। ফারাহ্ আহমেদ কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। ২১ জানুয়ারি এই নিয়োগ প্রাপ্তির আগে ফারাহ কঞ্জ্যুমার এডুকেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এবং কঞ্জ্যুমার ফাইন্যান্সিয়াল প্রটেকশন ব্যুরোর চীফ অপারেটিং অফিসারের সিনিয়র এডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়াও ফারাহ ইউএসডিএ-তেও কাজ করেছেন। ফারাহ আহমেদ বারাক ওবামার আমলেও ভিন্ন একটি দায়িত্বে ছিলেন।
ফারাহ্ আহমেদ ওয়াইয়োর একটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. মাতলুব আহমেদ এবং ড. ফেরদৌস আহমেদ দম্পত্তির কন্যা। ফারাহ্ আহমেদের নানা ড: আব্দুল বাতেন খান বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড: আব্দুল মঈন খানের ভাগ্নি ফারাহ্ আহমেদ।