নিউইয়র্কের নির্মাণ শিল্পে ভুয়া সেফটি আইডি কার্ড (ওসা) বানিয়ে কাজ করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ছেন কন্সট্রাকশন বা নির্মাণ শ্রমিকেরা। তাদের প্রতারণার কারণে মালিকদেরও অনেক সময় জেল–জরিমানা গুনতে হচ্ছে। সঠিক ওসা আইডি না থাকায় অনেক কর্মচারী দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পরও মালিকদের বিরুদ্ধে আদালতে যেতে দ্বিধা–দ্বন্দ্বে আছেন। এতে তারা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
নিউইয়র্ক সিটির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নির্মাণ খাতে কাজ করতে গিয়ে প্রতিবছর দুর্ঘটনার শিকার হন কয়েক শ কর্মচারী। এদের মধ্যে বেশির ভাগ কর্মচারীর অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ওসা) প্রশিক্ষণ নেই। ফলে সামান্য ভুলের জন্যও তারা বড় দুর্ঘটনায় পড়েন। অথচ ওসা ট্রেনিং থাকলে এই ভুল থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায় অনায়াসে।
নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের কাজ চলাকালে কারও কাছে যদি ওসা ট্রেনিং কার্ড পাওয়া না যায়, তাহলে অভিযুক্ত কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের জরিমানার বিধান রয়েছে। কাজ চলাকালে অদক্ষতার কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে কেউ মারা গেলে কোম্পানি ও মালিকদের জেল–জরিমানাও হতে পারে। ইতিমধ্যে নিউইয়র্ক সিটি বিল্ডিং ডিপার্টমেন্ট একাধিক কর্মচারী ও কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।
কোন নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরুর আগে কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জিসি নিয়োগ করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত জিসি কাজ বণ্টন করেন এসএসএম বা এসআইয়ের হাতে। এসএসএম সাব–কন্ট্রাক দেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে। সাব-কন্ট্রাক পাওয়া প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কাজ তদারকির জন্য সুপার ভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়। এই সুপারভাইজারের ৬২ ঘণ্টার সেফটিসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিউইয়র্ক সিটি অনুমোদিত প্রশিক্ষণ থাকতে হবে, যাতে নিরাপদে কাজ করতে পারে নির্মাণকর্মীরা।
যদি কোন কারণে দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে জিসিসহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে সিটি বিল্ডিং ডিপার্টমেন্ট। ফলে সাধারণ কর্মচারীসহ প্রত্যেকের সেফটি ট্রেনিং থাকা জরুরি। সেফটি ট্রেনিং করতে গেলে ট্রেনিং বাবদ কয়েকশ ডলার ফি নেওয়া হয়। আর এসব ফি বাঁচাতে এক শ্রেণির প্রতারক চক্রের মাধ্যমে অল্প দামে ভুয়া আইডি কার্ড বানানো হয়। ফলে কর্মচারী ও কোম্পানি—উভয়ই জরিমানা শিকার হচ্ছেন অহরহ।
সম্প্রতি ম্যানহাটনের একটি নির্মাণ কোম্পানিতে কাজ করতে গিয়ে কর্মচারী মিগুয়েল রোডরিগুয়েজ দুর্ঘটনায় নিহত হন। ঘটনার কারণ জানতে বিল্ডিং ডিপার্টমেন্ট তদন্ত কমিশন গঠন করেন। তদন্তে কোম্পানিতে সেফটি ট্রেনিংবিহীন কর্মী নিয়োগের ঘটনা বেরিয়ে আসে। পরে কোম্পানির মালিক হাসানকে আদালত এক বছরের জেল দেন এবং তার কোম্পানির আরও ২৮টি সাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আরেক ঘটনায় কাজ চলাকালে কুইন্সের এক সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে ৬২ ঘণ্টার সেফটি ট্রেনিংয়ের ভুয়া কার্ড পাওয়া যায়। প্রতারণার মাধ্যমে তিনি ওই কার্ড নেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
অন্যদিকে এক প্রতারক প্রশিক্ষক ব্রুকলিনের একটি কোম্পানিতে গিয়ে নিজেকে ওসা নিবন্ধিত প্রশিক্ষক বলে দাবি করেন। ওই কোম্পানির এক শ শ্রমিক থেকে ৬০০ ডলার করে ৬০ হাজার ডলার নিয়ে ভুয়া আইডি কার্ড দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। পরে বিল্ডিং ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জানতে পারেন, এসব আইডি কার্ড ওসা কর্তৃক ইস্যু করা ছিল না।
ভুয়া আইডি কার্ড প্রতারণা প্রসঙ্গে ওসার অনুমোদিত শিক্ষক ও ট্রিবিউন ট্রেনিং একাডেমির সিইও এমডি নোমান বলেন, তাদের স্কুলে ট্রেনিং শেষে ওসার সনদ ও কার্ড দিয়ে থাকেন। প্রতারণার বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। ট্রেনিং করার আগে অবশ্যই প্রশিক্ষক ও স্কুল সম্পর্কে সঠিক ধারণা রেখে ট্রেনিং নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অন্যথায় যে কেউ বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।