মাত্র দুই মিনিটের মধ্যেই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে গুলি করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল। আজ শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ওইদিন শামলাপুর চেকপোস্টে কী এমন ঘটেছিলো যে, মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে সাবেক পুলিশ পরিদর্শক (ইনচার্জ) লিয়াকত আলি অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তদন্ত কর্মকর্তারা। এমনকি এ ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটেছে নাকি আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছিল, সে প্রশ্নেরও উত্তর খোঁজা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ওই দিন এই ঘটনা নিজ চোখে দেখেছেন এমন প্রতক্ষ্যদর্শীদের ভাষ্যমতে, লিয়াকতের হাতে আগেই থেকেই অস্ত্র ছিলো। কথা হলো, অভিযানটি যদি হঠাৎই হয় তাহলে তার হাতে আগে থেকেই অস্ত্র থাকবে কেনো? আবার পুলিশের ভাষ্যমতে, মেজর সিনহা পুলিশের দিকে অস্ত্র তাক করাতেই লিয়াকত গুলি করেছে। তাহলে এখন প্রশ্ন উঠে ওইদিন চেকপোস্টে কী এমন ঘটেছিলো যে মেজর সিনহা মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে তার দিকে অস্ত্র তাক করেছিলো। এসব বিষয়ে তদন্ত করে দেখো হচ্ছে।
কর্নেল তোফায়েল আরো বলেন, ওইদিন মাত্র এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যে গুলির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু চেকপোস্টে গাড়ি থামানো থেকে শুরু করে পরিচয় জানতে চাওয়া, গাড়ি তল্লাশি করা এবং গুলি চালানো এই এক-দুই মিনিটের মধ্যে সম্ভব না। তাহলে কী ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ গুলি করেছে তা তদন্ত করে দেখতে প্রতিটি সেকেন্ড বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। চেকপোস্টে প্রতিটি পয়েন্ট ব্যারিকেড থেকে ব্যারিকেড ও প্রতক্ষ্যদর্শীর দূরত্ব সরেজমিনে পরিমাপ করা প্রয়োজন। তাহলেই এই ঘটনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
এদিকে ঘটনার সার্বিক তদন্ত করতে এ মামলার প্রধান তিন আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক (ইনচার্জ) লিয়াকত আলি ও সাময়িক বরখাস্তকৃত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে ঘটনাস্থলে নেওয়া হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে তাদের র্যাব-১৫ এর কার্যালয় থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যেমে কক্সবাজার-টেকনাফ পুরাতন মহাসড়ক দিয়ে শামলাপুর চেকপোস্টে নেওয়া হয়। এ সময় তাদের দেখতে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় করে।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ। পুলিশের পক্ষ থেকে ওই সময় বলা হয়, রাশেদ সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। এরপর তিনি ‘পিস্তল বের করলে’ দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের কথাও জানায় পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।
পরে ঘটনার বিচার চেয়ে টেকনাফ উপজেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারহার আদালতে ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। বর্তমানে এ মামলার তদন্ত করছে র্যাব।