যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে ইন্টারনাল মেডিসিন রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর নিযুক্ত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন বাংলাদেশি চিকিৎসক হামীম ইবনে কাওছার (এমডি, পিএইচডি, এফএসিপি)। চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে এই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি।
বাগেরহাটের কৃতি সন্তান হামীম ইবনে কাওছার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে (শেবাচিম) এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন তিনি। ১৯৯৭ সালে স্বাস্থ্য সেবার সনদ গ্রহণ করেন শেবাচিমের ২১তম ব্যাচের এ শিক্ষার্থী।
ছাত্রজীবনে তিনি মেডিকেল কলেজের ফার্স্ট বয় ছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় স্থান পান।
দেশের শিক্ষাঙ্গনে মেধার স্বাক্ষর রাখার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখেন তিনি। ২০০৫ সালে মলিকুলার বায়োলজিতে ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন করেন ডা. হামীম ইবনে কাওছার। পরবর্তীতে ক্লিভল্যান্ডের কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটিতে ক্যান্সার বায়োলজিস্ট হিসেবে গবেষণা করেন।
তিনি মুখগহ্বরের ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণের পদ্ধতি আবিষ্কার করে আমেরিকার বৈজ্ঞানিক সমাজে পরিচিতি লাভ করেন।
এরপর বিশ্ববিখ্যাত ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের হাসপাতাল থেকে ইন্টারন্যাল মেডিসিনে রেসিডেন্সি সম্পন্ন করেন তিনি। কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এ সময় ‘শ্রেষ্ঠ গবেষণা’ পদক লাভ করেন ডা. হামীম।
আমেরিকায় ইন্টারনাল মেডিসিনে বোর্ড সার্টিফাইড হবার পর তিনি সেন্ট লুইজ, মিজৌরিতে সেন্ট লিউকস হাসপাতালে ইন্টারনাল মেডিসিন রেসিডেন্সি প্রোগ্রামের এসোসিয়েট প্রোগ্রাম ডিরেক্টর হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
একই সময়ে তিনি রেসিডেন্টস কন্টিনিউটি ক্লিনিকের মেডিকেল ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি একই হাসপাতালের রিসার্চ এবং স্কলারলি এক্টিভিটিজের ডিরেক্টর হিসেবেও নিযুক্ত হন।
এই সময়ে তাঁর তত্ত্বাবধানে আমেরিকার রেসিডেন্টরা প্রায় ১৫টি গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করেন এবং আমেরিকায় জাতীয়ভাবে পুরস্কার অর্জন করে। তার এই দায়িত্বপালনে অসামান্য সফলতার জন্য তিনি ‘টিচার অব দ্য ইয়ার’ পদক লাভ করেন।
ডা. হামীম আমেরিকার চিকিৎসকদের বিভিন্ন জাতীয় সংগঠনের বৈজ্ঞানিক অধিবেশনগুলোতে বিচারকের দায়িত্বও পালন করেছেন সফলতার সঙ্গে।
ক্যান্সার বিজ্ঞানী ডা. হামীম ইবনে কাওছার বর্তমানে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যানসাস মেডিকেল সেন্টার থেকে হেমাটোলজি এন্ড অনকোলজিতে তিন বছরের ক্লিনিক্যাল ফেলোশিপ সম্পন্ন করছেন। একই সঙ্গে তিনি ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি ক্যান্সার নিয়ে গবেষণাও অব্যাহত রাখেন।
সম্প্রতি তিনি বিজ্ঞান বিষয়ক এক জার্নালে ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা এবং এর ব্যর্থতার উপর মৌলিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন।
মেডিকেল শিক্ষায় নিবেদিত ডা. হামীম ইবনে কাওছার অতিসম্প্রতি আমেরিকার মেরিল্যান্ড রাজ্যে ইন্টারনাল মেডিসিন রেসিডেন্সি প্রোগ্রামের ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।
রেসিডেন্টদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তিনি ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা এবং বিশ্ববিখ্যাত জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কোলাবরেশনে ক্যান্সার গবেষণায় নিয়োজিত থাকবেন।
বর্তমানে তিনি চিকিৎসক স্ত্রী এবং দুই কন্যাসহ আমেরিকার মিজৌরি অঙ্গরাজ্যে বসবাস করছেন।