চিটাগাং এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকার কমিটির মেয়াদ দুই বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন নির্বাচন দিতে গড়িমসি করছে বর্তমান কমিটি। ২০১৭ সালের এপ্রিলেএই কমিটি দায়িত্ব প্রাপ্ত হয় এবং কার্যকরী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে। কিন্তু তারা অবৈধভাবে এক বছরের বেশী সময় ধরে বহাল তবিয়তে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। এ নিয়ে সমিতির সাবেক নেতা এবং সমিতির সাধারন সদস্যদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ১৯ সদস্য কার্যকরী কমিটির মধ্যে ১১ জনই পদত্যাগ করেছেন। বাকি দশ জনের মধ্যে একজন হয়েছেন বহিস্কার, দুইজন থাকেন বাফেলো এবং আরেক সদস্য চলে গেছেন বাংলাদেশে। এগার সদস্য উপদেষ্টা ও অপর সম পরিমান সদস্য ট্রাষ্ট্রি বোর্ডের সদস্যরাদেরও কোন কার্যক্রম নেই। বর্তমানে ৬ সদস্য বিশিষ্ঠ কার্যকরী কমিটি নিয়ে চলছে চট্টগ্রাম সমিতি।
পদত্যাগ কারী সাধারন সম্পাদক মোঃ সেলিম জানান,আমরা দায়িত্ব নেয়ার কয়েক মাস পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সমিতির আগের কমিটির কিছু অনিয়ম দূর্নীতির তদন্ত করতে সভা আহবান করা হয়। একই সভায় সমিতির ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কে হবেন তানিয়েও আলোচনা করা হয়। কিন্তু কার্যকরী কমিটির সভাপতি আবদুল হাই জিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ কার্যকরী কমিটির কথা মানতে নারাজ এবং জিয়া প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম দূর্নীতিবাজদের পক্ষ নেন। তাই সমিতির কার্যকরী কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ ১১ সদস্য পদত্যাগ করেন। তখন পদত্যাগ না করে অন্য কোন উপায়ও ছিলনা। কারন আমরা যদি পদত্যাগ না করি তাহলে সমিতির মধ্যে চরম বিশৃংখলা সৃষ্টি হতো। মারামারি হতো। এতে করে সমিতির সুনাম ক্ষুন্ন হতো। তাই আমরা সেচ্চায় পদত্যাগ করি। সংখ্যাগরিষ্ঠ কার্যকরী কমিটি সদস্য পদত্যাগ করায় কার্যকরী কমিটির বৈধতা এখন আর নেই। তারপরও জিয়া অবৈধ ভাবে ক্ষমতা ধরে আছেন এবং কমিটির মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। তাই আমরা চাই নির্বাচন কমিশন গঠন এবং অচিরেই সুষ্ঠ নির্বাচন।
বর্তমান কার্যকরী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান লিটন জানান, কার্যকরী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এটা সত্য। কয়েক মাস আগে আমরা সাধারন সভা ডেকেছি । রেজুলেশন অনুযায়ি সাধারন সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে অচিরেই নির্বাচন কমিটি গঠন করা হবে। করোনার কারনে আমরা সহসা নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারবো বলে মনে হয়না। তবে আমরা আপ্রান চেষ্টা করছি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে। এখানে গ্রæপিংয়ের কারনে সদস্যদের পছন্দ অপছন্দ আছে। সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা কঠিন হবে।
সম্মিলিত চেষ্টায় হতে পারে নিরপেক্ষ নির্বাচনক মিশন গঠন।
কোষাদক্ষ মতিউর রহমান চৌধুরি জানান, সমিতির এখন দুটি একাউন্ট। ১১ জন কার্যকরী সদস্য পদত্যাগ করার পর ঐ একাউন্টটিতে এখন লেনদেন বন্ধ আছে। লেনদেন বন্ধ হওয়া একাউন্টে ৪৮ হাজার একশ ডলার জমাআছে। নতুনএকাউন্টে ৭০ হাজার ডলারআছে। তার থেকে ৩ আগষ্ট ২০২০ বিগত তিন বছরের ভবন ট্যাক্সের ২৭ হাজার ডলার দেয়া হয়েছে। বাকি আরো ৪৩ হাজার ডলার একাউন্টে জমা আছে। আমরা চেকের মাধ্যমে সব লেনদেন করছি । নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এটা একশ ভাগ সত্য। তবে তিনি অবৈধভাবে সমিতি পরিচালনা করছেন বিষয়টি অস্বীকার করেন। নিজেদের বৈধ কমিটি দাবিকরেন।
সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের বলেন, সংবিধান অনুযায়ি ১১ জন সদস্য পদত্যাগ করার পর কার্যকরী কমিটি পরিচালনার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। তারপরও বর্তমান কমিটি একটি সুষ্ঠনির্বাচন দেয়ার আশ্বাসে ২০১৮ সালের পিকনিকে আবদুল হাই জিয়াকে আমি সহযোগিতা করেছি। কিন্তু তারা তাদের কথা রাখেনি। অবৈধ ভাবে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এ ছাড়া ট্রাষ্ট্রি এবং উপদেষ্টা পরিষদের ২২ সদস্যর কার্যক্রমও স্থগিত করে রেখেছে। আমি চাই দ্রæত একটি অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।
সমিতির সাবেক ট্রাষ্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান মনির আহমেদ বলেন, এই কমিটি অবৈধ। তাদের সমিতি পরিচালনা করার কোন এখতিয়ার নাই। নানান অজুহাতে তারা সময় ক্ষেপন করছে। অচিরেই নির্বাচন কমিশন গঠন এবং ফেয়ার নির্বাচন জরুরী। এ ছাড়া সমিতির অন্য একটি একাউন্ট খোলা হয়েছে। এ বিষয়ে সাধারন সদস্যরা অবগত নেই। কি লেনদেন হচ্ছে এবং কোথায় খরচ করা হচ্ছে সে বিষয়েও কোন ধারনা নেই। এটা একটা পকেট কমিটির মতো। যখন যা ইচ্ছা তাই করছে তারা। সমিতির ভবন ভাড়া থেকে ৭ হাজার ডলার আসে প্রতিমাসে সে ডলারের কোন হিসাব নেই। করোনার সময় নিউইয়র্ক স্টেটের সব নির্বাচন গুলো সম্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু করোনার দোহাই দিয়ে তারা আরো ক্ষমতায় থাকতে চান সেটা এখন পরিস্কার।
এদিকে সমিতির তিন প্রভাবশালী সদস্য সাবেক সভাপতি কাজী আযম, ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ হানিফ এবংসমিতির সাবেক ট্রাষ্ট্রি বোর্ড সদস্য শাহজাহান সিরাজীর মতভেদের কারনে নির্বাচন কমিশন গঠন করা যাচ্ছেনা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা তাদের পছন্দের লোক নির্বাচন কমিশনে বসানোর জন্য সব সময় তৎপর থাকেন। তাই কমিশন গঠন করা দুরহ হয়ে পড়েছে।
ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ হানিফ বলেন, নির্বাচন বিষয়ে আমি বর্তমান কার্যকরী কমিটিকে একাধিকবার বলেছি। এর বেশী আমার কিছু করার নেই। আমার দায়িত্ব ভবন ভাড়া আদায় করা এবং ভবনের রক্ষনা বেক্ষন করা। এ ছাড়া ট্রাষ্ট্রি বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরাও কোন মিটিংয়ে আসেননা।
সাবেক সভাপতি কাজী আযম বলেন, যথা সময়ে নির্বাচন হলে আজকের এই অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের সৃষ্টি হতোনা। আমাদের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন হচ্ছেনা বিষয়টি আমি বিশ্বাস করিনা। কারন সমিতির মালিক সমিতির সাধারন সদস্যরা। আমি নই।
শাহজাহান সিরাজীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠো ফোনবন্ধ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি আবদুল হাই জিয়া বর্তমানকমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে স্বীকার করে বলেন, আমরা চাই দ্রæত নির্বাচন দিতে কিন্তু কোভিট ১৯ এর কারনে নির্বাচন দিতে পারছিনা। কোভিটের মধ্যে স্টেটের সব নির্বাচন সম্পন্ন করছেন সিটি নির্বাচন কমিশন তাহলে আপনারা কেন পারছেননা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটি আঞ্চলিক সংগঠন। মানুষ ঘর থেকে বের হতে চায়না। নতুন একাউন্ট প্রসঙ্গে বলেন, চিটাগাং সমিতির নামে বর্তমান সভাপতি, সেক্রেটারী এবং কোষাদক্ষের নামে নতুন একাউন্ট খোলা হয়েছে এবং চেকের মাধ্যমে সব লেনদেন হচ্ছে। নতুন কমিটি আসলে তাদেরকে সব বুঝিয়ে দেয়া হবে।
এ দিকে ২২ সদস্য বিশিষ্ঠ উপদেষ্টা ও ট্রাষ্ট্রি বোর্ডেরসদস্যদেরাও কোন মিটিংয়ে আসেননা। এসব সদস্যদের বেশীর ভাগই বর্তমান কমিটির কার্যক্রমের বিরোধী বলে জানা গেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম সমিতিতে দলাদলি, মারামারি এবং মামলা মোকদ্দমার জন্য চট্টগ্রাম সমিতির আগের সুনাম মুখ থুবড়ে পড়েছে। সমিতির অনেক স্বনামধন্য সম্মানিত সদস্য এখন আর সমিতির অনুষ্ঠানে যাওয়া বাদ দিয়েছেন। এ ছাড়া অযোগ্য নেতৃত্বের কারনে সমিতির সামাজিক কার্যক্রমও আগের মত হচ্ছেনা বলে সাধারন সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।