হাসান আহমেদ সোহাগ >>
বরিশাল সদরের কড়াপুর ইউনিয়নের রায়পাশা গ্রামে স্থাপত্যশৈলীর অনিন্দ্য সুন্দর আকর্ষণ মিয়াবাড়ি মসজিদ। এটি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত বলে মনে করা হয়। বরিশালের হাতেম আলী কলেজের চৌমাথা থেকে মাত্র নয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মসজিদটি। কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদটি মুঘল আমলে নির্মিত বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মসজিদ। দ্বিতল এ মসজিদ দেখতে অনেক সুন্দর ও কারুকার্যমণ্ডিত।
মসজিদটির নিচে রয়েছে ছয়টি দরজাবিশিষ্ট আবাসন ব্যবস্থা। সেখানে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। দোতলাকে কেন্দ্র করেই মূল মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দোতলায় মসজিদজুড়ে চমৎকার নকশার কাজ রয়েছে। মূল মসজিদে রয়েছে তিনটি দরজা, মসজিদের চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে আটটি বড় মিনার। বড় মিনারগুলোর মাঝে রয়েছে ছোট ছোট ১২টি মিনার। আবার ছোট মিনারগুলোর মাঝের স্থান সুন্দর কারুকার্যময় নকশায় অলংকৃত। মসজিদের মাঝখানে রয়েছে বড় তিনটি গম্বুজ। মাঝের গম্বুজটি সবচেয়ে বড়, যার ভেতরের অংশেও রয়েছে কারুকার্যময় সুন্দর নকশার সমাহার।
মসজিদটি নির্মাণের ইতিহাস সম্পর্কে জনশ্রুতি রয়েছে, মিয়াবাড়ি মসজিদটি বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের ব্রিটিশ আমলের সূচনালগ্নে নির্মিত। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা হায়াত মাহমুদ এ মসজিদ নির্মাণ করেন। বিদ্রোহের কারণে ইংরেজ শাসকেরা তাঁকে প্রিন্স অব ওয়েলস দ্বীপে নির্বাসন দেন। ইংরেজরা তাঁর উমেদপুরের জমিদারিও কেড়ে নেয়। দীর্ঘ ১৬ বছর নির্বাসনে থাকার পর দেশে ফিরে তিনি দুটি দিঘি ও দোতলা এই মসজিদ নির্মাণ করেন। মিয়াবাড়ি মসজিদের পূর্ব পাশে কয়েক একর জমি নিয়ে বিশাল একটি দিঘি রয়েছে, যা মসজিদের সৌন্দর্যকে আরো নয়নাভিরাম করে তুলেছে। মসজিদটির দোতলায় ওঠার জন্য রয়েছে আলিশান সিঁড়ি। সিঁড়ির নিচে মুসল্লিদের বসারও ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদটি ইসলামপ্রিয় মানুষের রুচি ও স্থাপত্যশিল্পে সুউচ্চ মানসিকতার পরিচয় বহন করে।
যাতায়াত : বরিশাল লঞ্চঘাট কিংবা বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোতে হাতেম আলী চৌমাথায় যেতে হবে, ভাড়া ১০ টাকা। চৌমাথা থেকে মাহিন্দ্রা রিজার্ভ করে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ঘুরে আসুন এই নিদর্শন দেখতে।