১৮১২ সালের পর এটাই প্রথম। ২০২১ সালের শুরুতেই আমেরিকার ইতিহাসে রচিত হলো অন্ধকার এক অধ্যায়। সেদিনের সেই দৃশ্য বিশ্বে দেখেছে, হেসেছে এবং অবাকও হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শাসন আমলে বহুবার আলোচনায় এসেছেন। তবে কোন বড় কাজে অংশ নিয়ে নয়, বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়ে অংশ নিয়ে। শুরু থেকেই তার আচরণ ও রাষ্ট্রপরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় ঝড় ওঠে। করোনার কালেও দেখা গেছে তার উদ্ভট আচরণ। কিন্তু নির্বাচনের ফল নিয়ে এবং সর্বশেষ তার সমর্থক দাঙ্গাকারীদের কাণ্ড দেখে চমকে গেছে বিশ্ব।
মার্কিন জাতীয় টেলিভিশনের ফুটেজে ধরা পড়ছে সেদিনের অভাবনীয় তান্ডবলীলা। যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা ক্যাপিটল হিলে একের পর এক তছনছ করা হয়েছে আসবাবপত্র। ভাঙা হয়েছে অগণিত দরজা, জানালার কাঁচ। কাঠের টুকরোয় ছেয়ে আছে গোটা বিল্ডং। এ যেনো এক যুদ্ধ ক্ষেত্র।
গত বুধবার ওই ঘটনার দিন ট্রাম্প তার সমর্থক দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে ক্যাপিটলের উদ্দেশ্যে নিজেও সশরীরে ‘মার্চ’ করতে চেয়েছিলেন। এ খবর প্রকাশিত হবার পরই টুইটার তাকে নিষিদ্ধ করে। তবে এসব নিয়ে যাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল, তাদের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, উপদেষ্টারা ট্রাম্পকে সেটি ‘না’ করতে বলেন।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানিয়েছে, ট্রাম্প তার সমর্থক দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে মানুষ জেগে উঠলে তাদের দমাবার জন্য ক্যাপিটলে ‘ন্যাশনাল গার্ড’ মোতায়েন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘটেছে উল্টো, বুধবার তার সমর্থক দাঙ্গাকারীদের দমনে সাহায্য করতে সেই ন্যাশনাল গার্ডকেই ডাকা হয়। যদিও শুরুতে ট্রাম্প ক্যাপিটল পুলিশকে দাঙ্গা মোকাবেলায় বাড়তি সাহায্য পাঠানোর বিষয়ে পিছু হটেছিলেন।
এদিকে দাঙ্গায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগে অবিলম্বে পদ থেকে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে সরিয়ে দেয়ার পক্ষে শতকরা ৫৭ ভাগ মার্কিনি। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে জনমত জরিপে এমন তথ্য পেয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স/ইপসোস। এতে বলা হয়, ৩রা নভেম্বরের ভোটে যারা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন তার প্রতি ১০ জনের মধ্যে সাতজন ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গার বিরোধিতা করেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ মার্কিনি বুধবারের হামলায় ট্রাম্পের ভূমিকা সমর্থন করেন না।
বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ছি ছি শব্দ উঠেছে। বিশ্বনেতারা তার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন। এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এমন কড়া শব্দ প্রয়োগ করতে দেখা যায়নি বিশ্বনেতাদের। এ জন্য তাৎক্ষণিকভাবে রয়টার্স/ইপসোস জরিপ চালায়। তাতে দেখা গেছে ডেমোক্রেট সমর্থকদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের মধ্যে মাত্র দু’জন চান ট্রাম্পের পদত্যাগ করা উচিত। ২৫তম সংশোধনী ব্যবহার করে ট্রাম্পকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া উচিত বলে মনে করেন শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ মার্কিনি। শতকরা ১৪ ভাগ মানুষ মনে করেন কংগ্রেসের উচিত ট্রাম্পকে অভিশংসিত করা এবং পদ থেকে সরিয়ে দেয়া। শতকরা ১৩ ভাগ বলেছেন, ট্রাম্পের উচিত পদত্যাগ করা।
সেদিনের ওই ঘটনার পর হোয়াইট হাউসের পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়ে গেছে। ট্রাম্পের বর্তমান অবস্থাকে বৃটেনের ‘পাগল রাজা জর্জ’ এবং ‘পুরো দানবীয়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন সবাই।