দীর্ঘ দিনের বিরোধ মিটিয়ে চট্টগ্রাম সমিতির নেতৃবৃন্দের মধ্যে ঐক্যর সুবাতাস বইছে। বর্তমান কমিটির মেয়াদ এক বছরের বেশী সময় অতিবাহিত হওয়ার পর অবশেষে নয় সদস্য বিশিষ্ঠ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সভাপতি আবদুল হাই জিয়ার নেতৃত্বে কমিশনারদের শপথ অনুষ্ঠানও সম্পন্ন হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন শীঘ্রই একটি সুষ্ঠ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবেন বলে কমিশনাররা জানিয়েছেন।
সমিতির অপর একাউন্টে ফ্রিজ থাকা ৪৮ হাজার ডলারও উদ্ধার করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে সমিতির ট্রাষ্ট্রি বোর্ডের কার্যক্রমও বিলুপ্ত করা হয়েছে।
২০১৭ সালের এপ্রিলে বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে আবদুল হাই জিয়ার কমিটির সভাপতি দায়িত্ব প্রাপ্ত হয় এবং কার্যকরী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে। কিন্তু তারা অবৈধভাবে এক বছরের বেশী সময় ধরে বহাল তবিয়তে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। এ নিয়ে সমিতির সাবেক নেতা এবং সমিতির সাধারন সদস্যদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ১৫ আগষ্ট সমিতির বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের নিয়ে চট্টগ্রাম সমিতিকে অবৈধ কমিটির হাত কিভাবে রক্ষা করা যায় এ নিয়ে জ্যামাইকার সাটফিন পার্কে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১১ সদস্য সমাধান কমিটি গঠন করা হয়।
এরই পেক্ষিত বর্তমান কমিটি আবদুল হাই জিয়ার নেতৃত্বে ৪ সেপ্টম্বর সমিতির কার্যলয়ে একটি সভা করেন। সভায় পাঁচ সদস্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এরা হলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার শাহজাহান মাহমুদ, কমিশনার মুজিবুলহক, রতন চৌধুরি, জসিমউদ্দিন, জয়নাল আবেদীন। তবে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কিনা অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। এর আগে ২৩ আগষ্ট ট্রাষ্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ হানিফকে চেয়ারম্যান পদ থেকে কোন নোটিশ ছাড়াই সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেন। অব্যাহতি পাওয়ার পরপরই মোঃ হানিফ আবদুল হাই জিয়ার বিরুদ্ধে জালিয়াতির সব বিষয় গুলো উপস্থাপন করেন। মোঃ হানিফ জানান, সভাপতি জিয়ার অপকর্মের প্রতিবাদ কারায় আমাদের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
এ দিকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন সদস্যদের নিয়ে সমিতির একাংশের নেতৃবন্দরা অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন হবে কিনা সংশয় প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি সভাপতি আবদুল হাই জিয়ার নজরে আনা হয়। ১৩ সেপ্টম্বর চারজন নতুন নির্বাচন কমিশনারকে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। এরা হলেন মোরশেদ রেজবী চৌধুরী, আবুতালেব চৌধুরী(চান্দু), এটিএমনাজির, মাষ্টার নাছির উদ্দিন চৌধুরী। সর্বমোট নয় সদস্য বিশিষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার গঠন করা হলে সমিতির সবার মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আস্থা ফিরে আসে।
আবদুল হাই জিয়ার নেতৃত্বে কমিটি গঠনের তিন মাসের মধ্যে কার্যকরী পরিষদের ১৯ সদস্যর মধ্যে ১১ জনই পদত্যাগ করেছেন। বাকি দশ জনের মধ্যে একজন হয়েছেন বহিস্কার, দুইজন থাকেন বাফেলো এবং আরেক সদস্য চলে গেছেন বাংলাদেশে। এগার সদস্য উপদেষ্টা ও অপর সম পরিমানসদস্য ট্রাষ্ট্রি বোর্ডের সদস্যরাদেরও কোন কার্যক্রম ছিলনা। ৬ সদস্য বিশিষ্ঠ কার্যকরী কমিটি নিয়ে চট্টগ্রাম সমিতি চলেছে হযবরল অবস্থায়। নির্বাচন কমিশন গঠনের পর থেকে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্থি ফিরে এসেছে।
বর্তমানে সমিতির অবস্থা প্রসঙ্গে কোষাদক্ষ মতিউর রহমান জানান, ১১ জন কার্যকরী সদস্য পদত্যাগ করার পর সমিতির অপর একটি একাউন্টে থাকা ৪৮ হাজার ডলার ফ্রিজ করে রাখাহয়ে ছিল বর্তমানে সে ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। নতুন একাউন্টে ৭০ হাজার ডলার আছে। তার থেকে ৩ আগষ্ট ২০২০ বিগত তিন বছরের ভবন ট্যাক্সের ২৭ হাজার ডলার দেয়া হয়েছে। বাকি আরো ৪৩ হাজার ডলার একাউন্টে জমা আছে।
এ দিকে সমিতির একাউন্ট থেকে ৪৬ হাজার ডলার সমিতির সভাপতি আবদুল হাই জিয়ার স্ত্রীর একাউন্টে কেন ট্রান্সফার করা হয়েছিল তা জানা যায়নি।
সভাপতি জিয়া বউয়ের নামে ডলারটান্স ফারের বিষয়টি অস্বীকার বরাবরের মতই অস্বীকার করে আসছেন। তবে ব্যাংক একাউন্টের ডকুমেন্ট অনুযায়ি ডলার যে ট্রান্সফার করা হয়ে ছিল তার ব্যাংক ডকুমেন্ট এখন সবার সমিতির সদস্য এবং মিডিয়ার হস্তগত রয়েছে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে সমিতির প্রধান নির্বাচন কমিশনার শাহজাহান মাহমুদ ও কমিশনার মোর্শেদ রেজবী চৌধুরী জানান, সমিতির নেতৃবৃন্দ আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন করার জন্য। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে সকল প্রকার সচ্চতা পালন করবো। একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রথম কাজ হবে একটি গ্রহনযোগ্য ভোটার তালিকা প্রনয়ন করা। সেই কাজটি আমরা শ্রীঘ্রই শুরু করবো। এ ছাড়া ভাল একটি সময়ে নির্বাচনের দিন তারিখ নির্ধারন করা হবে।